নিউজ ডেস্ক: পাথরের বিগ্রহর ওপর প্রায় দুকিলো ওজনের সোনার মুখা ও মালা দিয়ে এবার পুজিত হচ্ছেন বালুরঘাটের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী বুড়া মা কালি পুজো। এতদিন সোনার ছোটো মুখাতেই পুজো হয়ে আসছিল এই কালির। দীর্ঘদিন জমা হওয়া ভক্তদের সোনা গহনাকে একত্রিত করে তৈরি করা হয়েছে এই মুখা ও মালা।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কয়েকটি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহি জাগ্রত কালির মধ্যে অন্যতম বালুরঘাট শহরের তহবাজার এলাকার বুড়া মা কালি। পুরোনো রীতি রেওয়াজ মেনেই হয় এই কালি মাতার পুজো। তবে সময়ের সঙ্গে বর্তমানে পুজোর কিছু নিময় পরিবর্তিত হয়েছে। শতাব্দীর প্রাচীন হলেও এই পুজোকে কেন্দ্র করে জেলাবাসির মনে অফুরন্তু বিশ্বাস রয়েছে। কালী পুজোর দিন ও রাতে এই পূজাকে ঘিরে ভক্তদের ঢল নামে চোখে পরার মত। কোনো মূর্তি নয়, পাথরে বিগ্রহর উপরে পুরো সোনার মুখাকে পূজা করা হয় বুড়া কালি হিসেবে। এদিন দুপুর থেকে কয়েক হাজার অন্ন ভোগের স্লিপ বা কূপন দেওয়া হয় ভক্তদের। এই পুজোকে ঘিরে শুধুমাত্র দক্ষিণ দিনাজপুরবাসি নয়, পাশের জেলা উত্তর দিনাজপুর ও মালদা জেলা থেকেও প্রচুর ভক্ত বা দর্শনার্থী আসে। হাজার হাজার ভক্তদের নিরাপত্তায় বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। পুলিশ ও সিভিকের পাশাপাশি সাদা পোশাকে নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন করা হয়। লোহার বেরিকেড দিয়ে বুড়া কালির মন্দিরের রাস্তায় বাইক এবং অন্য যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়।
বুড়া কালি পুজো কমিটির সম্পাদক অমিত মহন্ত জানান, ভক্তদের জমা হওয়া সোনার বিভিন্ন অলংকারকে একত্রিত করে মুখা ও মালা তৈরি হয়েছে। সেখানে অন্তত ২ কিলো সেনা রয়েছে। নতুন সেই মুখা ও মালা মায়ের বিগ্রহের ওপর পরিয়ে এবারে আমাদের পুজো। এনিয়ে পৃথক উদ্দীপনা রয়েছে এবার। তবে বরাবরের মত সাধারণের জন্য কয়েক কড়াই খিঁচুরী রান্না তো বটেই, ভক্তদের জন্য হবে অন্নভোগ। এজন্য অন্তত চারহাজার কুপন দেওয়া হবে। অনান্য ভোগ জমা পরে ২০ হাজার মত। এছাড়া ৩০-৩৫ টি পাঁঠাবলি দেওয়া হয়ে থাকে। ভক্তদের যাতে কোনো অসুবিধা না হয় তার নজর থাকছে।
প্রসঙ্গত, প্রচলিত রয়েছে যে, কয়েকশো বছর আগে বর্তমান বালুরঘাট বুড়া মা কালি মাতার মন্দিরের পাশ দিয়ে আত্রেয়ী নদী বইতো। বর্তমানে বুড়া কালি মন্দির থেকে অনেকটা পশ্চিমে সরে গেছে এই নদী। লোক মুখে শোনা যায়, মন্দির ও বাজারের জায়গায় ছিল ঘন জঙ্গল। শতাব্দীর প্রাচীন পুজো হলেই এই পুজোর সঠিক বয়স কত তা কেউ বলতে পারে না। এক সময় আত্রেয়ী নদীর ধারে নিজে থেকেই নাকি ভেসে ওঠে বুড়া কালি মাতার বিগ্রহ। এক তন্ত্র সাধক সেই সময় ওই বিগ্রহকে তুলে নিয়ে এসে পুজো দেন। টিনের ঘেরা দিয়ে বুড়া মা কালি মাতার পুজো শুরু হলেও বর্তমানে বিশাল আকার মন্দির। প্রতিবারের মত এবারও সোনা, রূপোয় সুসজ্জিত করে পুজো হবে। পুজোতে এখন পাঁঠা বলি, শোল মাছ বলি হয়। জনশ্রুতি আছে আগে নাকি ২০ কিলো অজনের শোল মাছ বলি হত। একটা সময় নাকি কলকাতার রানী রাসমণি এই মন্দিরে পুজো দিতে আসতেন বজরা করে। আত্রেয়ী নদী থেকে জল নিয়ে এসে মায়ের পুজো দিয়ে আবার ফিরে যেতেন কলকাতায়। এই মন্দিরকে ঘিরে আরও জনশ্রুতি আছে। সন্ধ্যের পর নাকি অপরূপ ফুলের সুগন্ধি পাওয়া যেত এই এলাকা থেকে। শোনা যেত নুপুরের আওয়াজ। সেই সব নাকি এখন গল্প মনে হয় অনেকের। তা সত্ত্বেও জেলাবাসীর অগাধ বিশ্বাস বুড়া কালী মাতার উপর। এখন অত্যন্ত বিশ্বাসের সহিত পুজিত হন এই বুড়া মা কালি।