নিউজ
ডেস্ক: “পৈড়ান”
গ্রামবাংলা বিশেষ করে জঙ্গলমহলে তথা সুবর্ণ রৈখিক অববাহিকার একটি প্রাচীন
লৌকিক উৎসব। কালীপুজোর পরের দিন অর্থাৎ কার্তিক মাসের শুক্লা
প্রতিপদে কৃষি সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। আগেকার দিনে প্রায় সব
গৃহস্থ কৃষক পরিবার, বিশেষ করে সম্পন্ন কৃষক পরিবারের বাড়ীর
সম্মুখ ভাগে সকালের দিকে “পৈড়ান গাড়া” হত। আর তা সাজানো হত নানান ফুল দিয়ে আর লাগানো হতো
“পিঠালী বাটা “বা পিটুলী। অনেকটা লম্বা পাটের গোছাকে চুলের বিনুনী মতো
করা হত এবং সেটাকে মাথার দিকে গোলা করে
মাটির নীচে ফুট তিনেক গর্ত করে বেশ শক্তপোক্ত ভাবে পোঁতা হত। পাটের বিনুনী কে মাটির তলা থেকে
তুলতেন আর বাজতে থাকত কডা,নাকড়া,মাদল,
ঢোলের মতো নানা রকম বাদ্যযন্ত্র আর কান ফাটানো “কুয়াকুলি
“।
যে বা যাঁরা
পৈড়ান তুলতেন তাঁদের জন্য থাকত পুরস্কার। যার বেশির ভাগটা খাদ্যদ্রব্য। এলাকার
প্রবীণদের কাছ থেকে জানা যায়, কোন কোন সম্পন্ন কৃষক পুরস্কার হিসাবে খাসি বেঁধে রাখতেন।আবার বিনুনী
ছিঁড়ে গেলে যিনি পুঁতেছেন তাঁকে “জরিমানা ” হিসাবেও খাওয়াতে হতো পৈডান তোলার দলকে। পাটের
পরিবর্তে কোথাও বাঁশের কঞ্চি বা বনের শক্ত লতাকেও ব্যবহার করা হতো। দিন বদলেছে
বদলেছে উৎসবের ধরণ ও জৌলুস।এখন নাম কা ওয়াস্তে কোথায়ও কোথায়ও
গ্রামের মোড়ে ছেলে ছোকরা নিজ উদ্যোগে “পৈড়ান” গাড়েন এবং তোলেন।
বছর পনের আগেও
অনেক গ্রামে পৈড়ান হত। প্রবীণ লোকসংস্কৃতি গবেষক ড.মধুপ দে‘র মতে,পৈড়ান
উৎসব গ্রামীণ কৃষি সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত।কৃষির সমৃদ্ধি এই উৎসবের মূল লক্ষ্য।
লোকসংস্কৃতি বিষয়ে অনুসন্ধিৎসু শিক্ষক সুদীপ কুমার খাঁড়া‘র
মতে, “এই ধরনের লৌকিক উৎসব গুলোর সাথে দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলার
সংস্কৃতির শেকড়ের যোগ রয়েছে। হারিয়ে যেতে বসা এই উৎসব গুলোকে বাঁচিয়ে রাখার
জন্য সর্বস্তরে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে”।