নিউজ ডেস্ক: মাঝে
মাত্র ২ মাসেরও কম সময়। আগামী ২২ জানুয়ারি মকর সংক্রান্তির পর অযোধ্যায় রাম
মন্দিরের উদ্বোধন হবে। সেদিন প্রায় ৫০০ মিটার খালি পায়ে হেঁটে রামলালাকে কোলে নিয়ে
মন্দিরে প্রবেশ করবেন নরেন্দ্র মোদী। রামমন্দিরের উদ্বোধনকে ঘিরে দেশজুড়ে ভক্তদের
মধ্যে উন্মাদনা তুঙ্গে। অযোধ্যায় নির্মিত এই মন্দিরে বহু চমক অপেক্ষা করছে
দর্শনার্থীদের জন্য। রামমন্দিরের বিভিন্ন কারুকার্যে সিংহাসন, মূর্তি, স্তম্ভ দেওয়াল, মন্দিরের
দরজা সর্বত্র শিল্প নৈপুণ্য একেবারে ফুটে উঠতে দেখা যাবে। সবমিলিয়ে অনুষ্ঠানকে
জাঁকজমকপূর্ণ করে তুলতে কোনও খামতি রাখতে চাইছে না মন্দির কর্তৃপক্ষ। মন্দিরের দরজা
এবং থামগুলিতে থাকছে সোনার প্রলেপ। সারাদেশ থেকেই
কারিগররা লেগে রয়েছেন রামমন্দির তৈরির কাজে। রামমন্দিরে
থাকছে ৩৯২টি স্তম্ভ এবং টিক কাঠের ১৮টি দরজা, গর্ভগৃহের দরজাটি সবথেকে বড়। গর্ভগৃহে অধিষ্ঠান করবেন
রামলালা। রামলালার সিংহাসনটি ৮ ফুট লম্বা সোনার প্রলেপ যুক্ত মার্বেল দিয়ে তৈরি
হচ্ছে। গর্ভগৃহের
দরজাতে থাকছে বিশেষ নৈপুণ্যের ছোঁয়া। মূল মন্দির নির্মাণ করা হচ্ছে ৩৫০ ফুট বাই
২৫০ ফুট এলাকায়। ভূমিকম্প প্রতিরোধী করে গড়ে তোলা হয়েছে এই মন্দির। এমন মজবুত
করে গড়ে তোলা হচ্ছে, যাতে অন্তত ১০০০ বছর টেঁকসই হয় এই মন্দির।
রামলালা, সীতা, লক্ষ্ণণ
ও হনুমানের মূর্তি নয়, মন্দিরের ভিতরে বিভিন্ন দেবদেবীর
মূর্তি বসানো হচ্ছে। জানা গিয়েছে, রামমন্দির উদ্বোধনের আগে
আগামী বছর পয়লা জানুয়ারি থেকে ১৫ জানুয়ারি দেশের গ্রামে গ্রামে নির্মিত
রামমন্দিরের ছবি নিয়ে জনসংযোগ করবেন আরএসএস-এর স্বয়ংসেবকরা। জানা গিয়েছে, দেশের প্রায় ৫ লক্ষ গ্রামে চলবে এই প্রচারাভিযান। মন্দির উদ্বোধনের দিন
দেশের সকল ছোটবড় ধর্মস্থানগুলিতে উৎসবেরও আয়োজন করা হবে।শুধু তাই নয়, উদ্বোধনের পর ৪০ দিন ধরে মণ্ডলোৎসবের পরিকল্পনা করেছে মন্দির কর্তৃপক্ষ।
ওই ৪০ দিন ধরে ভগবানকে রুপোর কলস দিয়ে অভিষেক করাতে পারবেন ভক্তেরা।দেশের এতবড়
একটা উৎসবকে ঘিরে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাসিন্দাদের রাম মন্দির দর্শনে নিয়ে আসা,
এলাকা ধরে ধরে প্রভাতফেরি, ধর্মীয় অনুষ্ঠান,
বক্তৃতাসভার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
মন্দির
কর্তৃপক্ষ সূত্রের খবর, ৪০ দিনের যে কর্মসূচি উপলক্ষ্যে ডিসেম্বরের গোড়ায় একটি মোবাইল
অ্যাপ্লিকেশন চালু করা হবে। যার নাম রাখা হচ্ছে ‘শ্রীরাম সেবা’। এর মাধ্যমে অভিষেক
অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার জন্য আবেদন জানাতে পারবেন ভক্তেরা। তবে যে সকল ব্যক্তি
সমাজসেবার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন (গো-সেবা, দুঃস্থ শিশুদের
শিক্ষার ব্যবস্থা, অন্নবিতরণ, বয়স্কদের
সেবা) তাঁরা অগ্রাধিকার পাবেন। আবেদনকারী ব্যক্তিকে সমাজসেবার সঙ্গে যুক্ত
শংসাপত্র দেখাতে হবে। অন্যদিকে এই
মন্দিরের পুরোহিত পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন দিয়েছিল রাম জন্মভুমি তীর্থক্ষেত্র
ট্রাস্ট। মাত্র ২০টি শূন্যপদের জন্য আবেদনপত্র জমা পড়েছে ৩ হাজার।অনেক
ঝাড়াই-বাছাইয়ের পরেই মন্দিদের পুরোহিত নিয়োগ করা হবে বলে রাম মন্দির ট্রাস্টের
তরফে জানানো হয়েছে। ৩০০০
আবেদনকারীর মধ্যে মেধার ভিত্তিতে প্রাথমিকভাবে ২০০ প্রার্থীকে বেছে নেওয়া হয়েছে।
ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে ২০০ জনের মধ্য থেকে ২০ জন প্রার্থীকে নির্বাচন করা হবে।ইন্টারভিউ
নেওয়ার জন্য তিন সদস্যের একটি প্যানেল তৈরি করা হয়েছে। প্যানেলে থাকছেন, বৃন্দাবনের পুরোহিত জয়কান্ত
মিশ্র এবং অযোধ্যার দুই মহন্ত – মিথিলেশ নন্দিনী শরণ এবং সত্যনারায়ণ দাস। ইন্টারভিউয়ে
পাশ করলে, নির্বাচিত ২০ জন প্রার্থীদের
পুরোহিত হিসেবে নিয়োগ করা হবে। তারপর থাকছে ৬ মাসের আবাসিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা।
এই প্রশিক্ষণের জন্য একটি ধর্মীয় পাঠ্যক্রমও তৈরি করা হয়েছে। প্রশিক্ষণ চলাকালীন,
বিনামূল্যে খাবার এবং থাকার জায়গা দেওয়া হবে। এছাড়া, বৃত্তি হিসাবে মাসে মাসে ২,০০০ টাকা করে পাবেন
তাঁরা। প্রশিক্ষণ শেষে এই প্রার্থীদের বিশেষ শংসাপত্র দেওয়া হবে বলেও জানানো
হয়েছে।
রাম মন্দিরের
কাজ প্রায় ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ শেষ হয়ে গিয়েছে। গর্ভগৃহ, দক্ষিণ দিকের বেসমেন্ট, উপরের অংশে ৭০টি পিলারের ভাস্কর্যের কাজ,পশ্চিমের
দেওয়াল সহ মন্দিরের অনেকাংশের কাজ শেষ হয়েছে। তবে বাকি থাকা মন্দিরের পূর্ব দিকের
দেওয়াল, মন্দিরের নীচের তলা, দ্বিতীয়
তলা, চারটি মণ্ডপ, গৃহমণ্ডপ এবং প্রথম
তলার কাজ সময়ের আগে শেষ হয়ে যাবে বলে মন্দির কর্তৃপক্ষের তরফে জানা গিয়েছে।
অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণে আনুমানিক খরচ পড়বে ১৮০০ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের
মধ্যেই মন্দির নির্মাণের কাজ শেষ করা হবে বলে জানা গিয়েছে। দেশবাসীর কাছে মন্দির
কর্তৃপক্ষের আবেদন, উদ্বোধনের দিন যেন ঘরে ঘরে হনুমান চালিশা,
রামচরিতমানস পাঠ করা হয়।একইসঙ্গে মন্দিরে প্রাণপ্রতিষ্ঠার সময় যাতে
সকলে টেলিভিশনে তা দেখেন এবং ওই দিন সূর্যাস্তের পরে বাড়ির সামনে প্রদীপ জ্বালানো
হয় ও শাঁখ বাজানো হয়।