কথায় আছে মঙ্গলে উষা এবং বুধে পা। সেই মঙ্গলেই এল মঙ্গলবার্তা। মঙ্গলবার সকালেই জানা গেল সব কিছু ঠিক থাকলে, আজই সেই দিন, যেদিন সূর্যের মুখ দেখবেন উত্তরকাশীর সুরঙ্গে আটকে পড়া ৪১ জন শ্রমিক। আর হলও তাই, এদিন রাত আটটা নাগাদ ৪১ জন শ্রমিকের মধ্যে প্রথম ঝাড়খণ্ডের বিজয় হোরেকে উদ্ধার করে আনা হল গুহার বাইরে। তারপর আর কী, একে একে উদ্ধার করা হল আটকে থাকা ৪১ জন শ্রমিককেই। আর এই পুরো পক্রিয়ায় সময় লাগল মাত্র ৪৯মিনিট।
হার মেনেছিল যন্ত্র, কিন্তু হার মানেনি মানুষ। গত সাতদিন ধরে একের পর এক বাধা এসেছে। প্রথমে আমেরিকান অগার মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছিল। কিন্তু সুরঙ্গের মধ্যে কাজ চলাকালীন অগার মেশিনের ইঞ্জিনে ব্লাস্ট হয়। তারপর উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা বিভিন্ন বিকল্প ব্যবস্থার পরিকল্পনাও করেছিল। কিন্তু দেশ-বিদেশ থেকে আনা উন্নতমানের যন্ত্র এবং তাবড় তাবড় প্রযুক্তিবিদদের তাক লাগিয়ে এই একুশ শতকেও উদ্ধারকাজে সফলতা এল মানুষের হাত ধরেই।উত্তরকাশীর সুরঙ্গে ইঁদুরের মত খননকার্য চালিয়ে এল সাফল্য।আর তাঁদের প্রচেষ্টাই সফলতার মুখ দেখল গোটা বিশ্বের মানুষ। বিশ্বের তৃতীয় এবং দেশের প্রথম দীর্ঘতম উদ্ধার অভিযান হিসাবে উঠে এল উত্তরকাশীর সিল্কিয়ারা টানেলের এই ঘটনা।
কবে আলোর মুখ দেখবে, এই আশায় প্রহর গুনছিল উত্তরকাশীর সিল্কিয়ারা টানেলে আটকে পড়া ৪১ জন শ্রমিক। অপেক্ষায় রাত কাটাচ্ছিল শ্রমিকদের উদ্বিগ্ন পরিবারগুলিও।আর শ্রমিকদের উদ্ধারকাজে থাকা দলগুলিও নিরলস পরিশ্রম করে একটার পর একটা পথ বার করছিল। অবশেষে তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমেই ১৭ দিনের মাথায় গুহার বাইরে বেরোলেন বাংলার ৩ সহ ৪১ জন শ্রমিক।মঙ্গলবার রাত ৭টা ৪৯ মিনিটে অভিযান শুরু হয়। শেষ হয় ৮টা ৩৮ মিনিটে।
১৭দিন ধরে অন্ধকার গুহায় বন্দিদশা কাটানো। সূর্য়ের আলোও দেখেননি। তাই শ্রমিকদের স্বাস্থ্য নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল।সুরঙ্গের বাইরে অস্থায়ী স্বাস্থ্যশিবিরের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তৈরি ছিল চিনুক চপারও।তবে কোনও কিছুরই প্রয়োজন পড়েনি। কারণ গুহার বাইরে আসা প্রত্যেক শ্রমিকের স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর তাঁরা সুস্থ বলেই জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
তবে এদিন উদ্ধারের পর শ্রমিকদের সুরঙ্গের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা অ্যাম্বুলেন্সে করে ৩০ কিলোমিটার দূরে চিনিয়ালিসৌর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।উত্তরকাশী জেলা হাসপাতালেও বিভিন্ন ব্যবস্থা সহ ৪১টি শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
গত ১৭দিন ধরে যে মূহূর্তের অপেক্ষায ছিল গোটা দেশ। তা সফল হওয়ায় গোটা দেশ জুড়েই ছড়িয়ে পড়ে স্বস্তি। উদ্ধারকারী দলের নিরলস প্রচেষ্টার প্রশংসায় পঞ্চমুখ সকলে। আটকে পড়া শ্রমিকদের নিরাপদে বের করে আনায় উদ্ধারকারী দলের ভুয়সী প্রশংসা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। এই উদ্ধার অভিযানকে তিনি ‘মানবতা এবং দলবদ্ধভাবে কাজের’ অসাধারণ উদাহরণ বলেছেন। শুধু টুইট করাই নয়, উত্তরাখণ্ডের মুক্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামিকে ফোন করে উদ্ধার হওয়া শ্রমিকদের শরীর-স্বাস্থেরও খবর নেন তিনি।
উচ্ছ্বাস ও স্বস্তি প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুও। উদ্ধারকারী দলের সকল সদস্য এবং যে সমস্ত বিশেষজ্ঞ এই কাজে পরামর্শ দিয়েছেন, তাঁদের সকলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, “উত্তরকাশীতে একটি সুড়ঙ্গে আটকে পড়া আমাদের ৪১ জন শ্রমিক ভাইকেই নিরাপদে উদ্ধার করা হয়েছে। এটি দেশের জন্য বড় খবর। এতদিন টানেলে এমন চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য তাদের সাহসিকতাকে সেলাম জানায় দেশ। আমাদের সহ-নাগরিকদের জীবন বাঁচানোর জন্য অক্লান্ত প্রচেষ্টা চালানো সমস্ত ব্যক্তি এবং সংস্থাকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই।”
এদিন সুরঙ্গ থেকে শ্রমিকেরা বাইরে বেরিয়ে আসতেই উত্তরকাশী তো বটেই গোটা দেশজুড়ে অকাল দিওয়ালি পালন করা হয়েছে।উঠল ভারত মাতা কী জয় স্লোগানও। মানবতা ও দল বেঁধে কাজের অসাধারণ উদাহরণ হিসেবে গোটা বিশ্বের কাছে উঠে এল উত্তরকাশীর এই ঘটনা।