নিউজ ডেস্ক: বিডিওদের
বিরুদ্ধে শাসক দলের হয়ে কাজ করার অভিযোগ উঠেছে অতীতে। কিন্তু এর ব্যতিক্রম আছেন কিছু
মানুষ। ঘড়ির কাঁটা তখন সকাল ৮ টা ছুঁই ছুঁই।সাইকেল চালিয়ে রওনা
দিয়েছেন জনৈক এক ব্যক্তি ।দেখলেই মনে হবে সাধারণ একজন গ্রামের মানুষ! মনে হতে পারে
যেন,নিত্যদিনের কাজের খোঁজে বেরিয়েছেন।বাসন্তী ব্লকের
বিভিন্ন গ্রামে পৌঁছে গিয়ে সাধারণ মানুষের সুখ দুঃখ,চাওয়া
পাওয়ার খোঁজখবর নিচ্ছেন।কখনও যক্ষ্মা রোগীর বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নিচ্ছেন,সরকারী পরিষেবা কিংবা অনুদান সঠিক সময়ে পাচ্ছেন কি না। কখনও আবার
অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্রে ঢুঁ মারছেন।সেখানে শিশুদের খাবারের গুণগত মান ঠিক রয়েছে কি না
নিজেই চেখে পরীক্ষা করছেন।পড়াশোনা ঠিকঠাক হচ্ছে কি না তাও যাচাই করছেন।কখনও আবার
ঝাড়ুদারের হাত থেকে ঝাড়ু নিয়ে ঝাঁট দিয়ে তাদের কে সাহায্য করছেন।এমন মানুষ কে দেখে
অনেকেই চিনতে পারছেন না। কেউ কেউ মন্তব্য করছেন,বার্ধক্য
ভাতা কিংবা বিধবা ভাতার জন্য একাধিকবার ব্লক অফিসে গিয়েছি। কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
আচমকা এক ব্যক্তি সকালে করে সাইকেল চালিয়ে আসছেন খোঁজ নিচ্ছে কারোর কোন অসুবিধা
রয়েছে কি না? যদি সমস্যা থাকে কিংবা কোন সরকারী প্রকল্পে
নাম নথীভুক্ত করতে সমস্যা হয় তাহলে ব্লক অফিসে গেলে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।তাদের
আরো দাবী যেখানে পাড়াল মোড়ল মাতব্বরদের পায়ে তেল মাখিয়ে বিধবা কিংবা বার্ধক্য
ভাতা মেলেনি,সেখানে অপরিচিত এক লোক পাড়ায় পাড়ায় হাজীর হয়ে
বলেছেন, সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে ব্লক অফিসে গেলে। কখনও
পায়ে হেঁটে আবার কখনওবা সাইকেল চালিয়ে পাড়ায় পাড়ায় এমন বলে বেড়াচ্ছেন। লোকটা
সম্ভবত পাগল হবে!
যদিও এতকিছু বলার পর গ্রামের মানুষের ভুল ভেঙে
গিয়েছে।পরে তারা জানাতে পারেন,যে ব্যক্তি পাড়ায় পাড়ায়
হাজীর হয়ে সাধারণ মানুষের সুখ দুঃখের কথা
শুনছেন এবং সমস্যার আশ্বাস দিচ্ছেন,তিনি আর কেউ নন। তিনিই
স্বয়ং বাসন্তী ব্লকের সমষ্টি উন্নয়ণ আধিকারীক সঞ্জীব সরকার। এমন খবর এলাকায় চাউর
হতেই বাসন্তী ব্লক অফিসে প্রতিদিনই সাধারণ মানুষের আনাগোনা বেড়ে গিয়েছে।এমনকি যে
সমস্যার জন্য দীর্ঘ ১০ কিংবা ১৫ বছর দৌড়ঝাঁপ করেও সমস্যা মেটেনি,সেই সমস্যা মিটে যাচ্ছে দুই কিংবা তিন দিনেই।
নতুন ব্লক সমষ্টি উন্নয়ণ আধিকারীকের এমন মানবিক
উদ্যোগ জনসমকক্ষে আসতেই সাধারণ মানুষ থেকে রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্বরা প্রশংসা করছেন।
বাসন্তী ব্লকের কয়েকটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের
দিদিরা জানিয়েছে, ‘প্রায় প্রতিদিনই সকালে কোন
না কোন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে গিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন।সমস্যা থাকলে তা সমাধানের পথ
বাতলে দিচ্ছেন।আমাদের বিভিন্ন সময়ে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তারজন্য সিডিপিও
কিংবা বিডিও কে জানানোর জন্য অফিসে যেতে হতো।আর বর্তমানে খোদ বিডিও সাহেব
আমাদের কেন্দ্র হাজীর হয়ে সুবিধা অসুবিধার কথা জানতে চাইছেন।বিডিও সাহেবের এমন
উদ্যোগ তুলনা হয় না।এছাড়াও বিগত দিনে বাসন্তী ব্লক কেন সমগ্র ক্যানিং মহকুমা
এলাকায় এমন বিডিও ছিলেন বলে মনে হয় না। যা অত্যন্ত বিরলতম ঘটনা।
এমন কার্য্যক্রম প্রসঙ্গে বাসন্তী ব্লক সমষ্টি
উন্নয়ণ আধিকারী সঞ্জীব সরকার কে জিঞ্জাসা করা হলে তিনি বলেছেন, ‘ব্লক উন্নয়ণ আধিকারীক হয়ে যদি সাধারন মানুষের সুখ দুঃখ না বুঝতে পারি
তাহলে উন্নয়ণ হবে কি করে। ফলে আমি আমার মতো করে সাধারণ মানুষের সুখ দুঃখের কথা
জানতে প্রায় প্রতিদিনই সকালে একাই বেরিয়ে পড়ি। কখনও পায়ে হেঁটে আবার কখনও বা ১০/২
কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে পৌঁছে যাই গ্রামের মানুষের কাছে। এটা আমার নিত্যদিনের
রুটিন।এক প্রকার এটা আমার কর্তব্য।তারপর অফিসে গিয়েই সমস্ত সমস্যার সমাধানের উপায়
বের করে সমাধান করার চেষ্টা করি।’