নিউজ ডেস্ক: TMC-র মানে এখন তু-ম্যায় করাপশান হি কোরাপশান। শনিবার কৃষ্ণনগরের সভা থেকে এমনটাই বললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তৃণমূলকে দুর্নীতি ইস্যুতে কড়া আক্রমণ হানলেন প্রধানমন্ত্রী। ১০০ দিনের কাজে ‘বঞ্চনা’ ইস্যুতে গত কয়েক মাসে বিজেপিকে নিশানায় এনে বারবার সরব হয়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব। এদিনের সভায় তার পাল্টা জবাব দিলেন মোদী।
দুর্নীতি নিয়ে তৃণমূলকে তোপ দেগে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই তৃণমূল সরকার প্রতিটি স্কিমকে স্ক্যামে পরিণত করে দেয়। তবে মোদীর গ্যারান্টি, আগামী ৫ বছর ফ্রি রেশন দেবে। তবে তৃণমূল তাতেও নিজেদের স্টিকার লাগায়। রেশন চুরি করতেও তারা পিছ পা হয় না।’
এদিন দুর্নীতি প্রসঙ্গে মোদী আরও বলেন, তৃণমূল অত্যাচার আর দুঃশাসনের অপর নাম হয়ে গেছে। তৃণমূল মানে ভ্রষ্টাচার, পরিবারবাদ। তৃণমূল বাংলার মানুষকে গরীব বানিয়ে রাখতে চায় যাতে ওদের খেলা চলতে থাকে। পাশাপাশি তিনি আরও বলেন বাংলার মানুষ এটা বুঝে নিন, মোদীর গ্যারান্টি মানে গ্যারান্টি পূরণ হওয়ার গ্যারান্টি।
এরপর সন্দেশখালি প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী তৃণমূলকে নিশানা করে বলেন, এতদিন রাজ্য সরকার চায়নি সন্দেশখালির দোষী গ্রেফতার হোক। তৃণমূল সন্দেশখালির মায়েদের আর্তি শোনেনি। কিন্তু সন্দেশখালির পাশে দাঁড়িয়েছে বিজেপি। তাই তৃণমূল অপরাধীকে ধরতে বাধ্য হয়েছে। পাশাপাশি তিনি বলেন বাংলাকে গরিব করে রাখতে চায়। সেই কারণেই তৃণমূল সরকার দরিদ্রদের জন্য প্রকল্প চালু করতে দিচ্ছে না। তৃণমূল বাংলার মানুষকে নিরাশ করছে। এই তৃণমূলকে ভোটের মাধ্যমে শিক্ষা দিতে হবে।
তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল মা মাটি মানুষের স্লোগান দিয়ে ভোট নিয়েছে। কিন্তু আজ মা মাটি মানুষ সবাই কাঁদছে। সন্দেশখালির মানুষ বিচার চেয়েছে। কিন্তু তৃণমূল সরকার ওদের শোনেনি। এখানে পুলিশ নয়, অপরাধী ঠিক করে তাকে কখন গ্রেফতার করা হবে, কখন সে সারেন্ডার করবে। তৃণমূল সরকার কখনও চায়নি ও শাস্তি পাক। কিন্তু বাংলার নারী শক্তি মা দুর্গার রূপ ধারণ করেন। তাদের পাশে আমরা দাঁড়াই। তখন সরকার বাধ্য হয় গ্রেফতার করতে। মহিলাদের জন্য কোনও প্রকল্প এখানে রাজ্য সরকার লাগু হতে দেয় না।
কিছুদিন আগেই কল্যাণী এইমস আমরা মানুষকে উৎসর্গ করেছি। ১০০০ সজ্জার এই হসপিটাল রোজগারে সুযোগ আনবে, স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নতি হবে। কিন্তু তাতে তৃণমূলের সমস্যা। ওরা বলছে এটার অনুমোদন নেই। পুরো রাজ্যে তোলাবাজি, দুর্নীতি, গুন্ডামি পুরো পারমিশন রয়েছে। কিন্তু এত বৃহৎ একটা কাজে তৃণমূল পরিবেশের দোহাই দিয়ে পারমিশনের কথা বলছে। তৃণমূলে আগে কমিশন তার পর পারমিশন। কমিশন না দিলে পারমিশন নেই। তৃণমূল আয়ুষ্মান ভারত লাগু হতে দিচ্ছে না। আমরা পশ্চিমবঙ্গে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নতি করেছি। ২০১৪ এর আগে রাজ্যে সরকারি মেডিকেল কলেজ ছিল ১৪ টি। এখন দশ বছরে সেই সংখ্যাটা হল ২৬। দ্বিগুণের বেশি। এক সময় এই জায়গা পাটের জন্য বিখ্যাত ছিল। কিন্তু তৃণমূলের আমলে পাটের চাষ এবং ব্যবসা নষ্ট হয়ে গেছে। বিজেপি সরকার পাটের জন্য নানা উদ্যোগ নিয়েছে। বিজেপি সরকার গম, চিনির বস্তায় জুটের বস্তার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে। প্লাস্টিকের বস্তা বন্ধ করেছে। পাট চাষে এমএসপি বাড়ানো হয়েছে। ৩ লাখের বেশি কৃষককে বীজ দেওয়া হয়েছে। সবাই পিএম কিষান থেকে লাভ পাচ্ছেন।
পুরো দেশে বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও চলছে। এখানে লাগু হতে দিচ্ছে না। মহিলা হেল্প লাইন চালু হয়েছে। তৃণমূল সেটা নিয়েও উদাসীন। দেশজুড়ে ১০ কোটি উজ্বালা যোজনা দেওয়া হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ থেকে ১৩ লাখ এপ্লিকেশন এসেছে। কিন্তু উজ্জ্বলা কমিটি বানানো হয়নি এখানে। এরা চাইছে কেন্দ্র সরকারের প্রকল্পের সুবিধা কারা পাবে সেটা তৃণমূলের তোলাবাজরা ঠিক করবে। এখানে ২৫ লাখ ভুয়ো জবকার্ড আছে। যে জন্মায়নি তার নামেও কার্ড হয়েছে। যে টাকা গরীব মানুষের পাওয়ার কথা ছিল সেটা তোলাবাজরা পেয়েছে। ওদের একটাই লক্ষ্য কেন্দ্রের প্রকল্পকে রাজ্য সরকারের স্টিকার লাগিয়ে চালানো। স্কিমকে স্ক্যামে বদলে দিয়েছে তৃণমূল।
মোদী জানান ৬ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে রেশন দেওয়া হচ্ছে। আগামী ৫ বছর এই যোজনা চলবে। এটা মোদীর গ্যারান্টি। এর পাশাপাশি তিনি জানান আগামী ৫ বছরে অসংখ্য কর্মসংস্থান করবে বিজেপি। এই সময়ে পশ্চিমবঙ্গ তেও আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। তার জন্য লোকসভা ভোটকে হাতিয়ার করতে হবে। বাংলার বিকাশ হলে তবেই দেশের বিকাশ হবে। প্রতি লোকসভায় পদ্ম ফুটতে হবে। এইবার এনডিএ সরকার ৪০০ পার। সবশেষে এমন বক্তব্য রেখেই সভা শেষ করেন মোদী।