মঙ্গলবার সকাল হতেই চাকদার পাজির মোড়
লালপুর, সাহেব পুকুর পাড় কেঁপে ওঠে বোমা বিস্ফোরণের শব্দে। বোমা
ফেটে গুরুতর আহত হন এক ঠিকা শ্রমিক। আহত শ্রমিকের নাম শ্যামল সরকার। বয়স আনুমানিক
৪৫ বছর। তিনি চুয়াডাঙার বাসিন্দা। এই খবর সম্প্রচারের পরদিন বুধবার এলাকার খবর
নিতে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় সংবাদ মাধ্যম। খবর সংগ্রহের সময় সংবাদ মাধ্যমের ক্যামেরায়
ধরা পড়ে দুর্ঘটনাস্থলের অদূরেই পড়ে আছে তাজা বোমা। ঘটনাস্থলে পাহারায় থাকা সিভিক
ভলেন্টিয়ার্স এর নজরে আসে ঘটনাস্থলে পড়ে থাকা তাজা বোমাটি। তৎক্ষণাৎ খবর দেওয়া
হয় চাকদা থানায়। ঘটনাস্থলে ছুটে আসে চাকদা থানার পুলিশ। খবর জানাজানি হতেই
চাঞ্চল্য ছড়ায় এলাকায়। এরপর একে একে চাকদা থানার একাধিক
পুলিশকর্মী এবং বহু সিভিক ভলেন্টিয়ার্স এরা ঘটনাস্থলে আসে। পড়ে থাকা বোমাটি
উদ্ধার করতে উদ্যোগী হয় পুলিশ। এরই মধ্যে ঘটনাস্থলে পড়ে থাকা ওই বোমার ঢিল ছোড়া
দূরত্বে আরও একটি তাজা বোমা নজরে আসে এক পুলিশ কর্মীর। তাতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে
পুলিশ প্রশাসন। তৎপরতার সঙ্গে শুরু হয় তল্লাশি। এই তল্লাশিতে ওই জমির মধ্যেই আরো
একটি বোমার হদিশ মেলে। খবর দেওয়া হয় বোম স্কোয়াডে। কিন্তু তার আগেই তড়িঘড়ি সিভিক
ভলেন্টিয়ারদের দিয়ে সম্পূর্ণ অরক্ষিতভাবে উদ্ধার করা হয় বোমাগুলি। যা নিয়ে প্রশ্ন
উঠেছে!
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পাজির মোড় লালপুর সাহেব পুকুরপাড়ে মৌসুমী বিশ্বাসের
জমিতে নির্মাণকাজ চলছিল। নির্মাণকাজে মাটি খননের কাজ করছিলেন চুয়াডাঙ্গার চার
শ্রমিক। নির্মাণের কংক্রিটের পিলার করার উদ্দেশ্যে মাটি খনন শুরু করেন ওই
শ্রমিকেরা। বেশ কিছুটা মাটি খননের পর হঠাৎই মাটির নিচে একটি ড্রাম দেখতে পান
শ্যামল সরকার। না বুঝেই শ্যামল সরকার কোদাল দিয়ে বোমা মজুত থাকা ওই ড্রামে কোপ
মারেন। বুঝে ওঠার আগেই ফেটে যায় গোটা চারেক বোমা।
ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনীর এক
কোম্পানির জওয়ানও এসে পৌঁছেছে চাকদায়। শুরু হয়েছে রুট মার্চ। মাঝে মধ্যেই চলছে
চাকদার বিভিন্ন এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহলদারি। তারই মধ্যে এই বোমা
বিস্ফোরণের ঘটনায় সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে রীতিমতো উঠেছে প্রশ্ন?
এই ঘটনায় সরব হয়েছে বিরোধীরা। বোমা
মজুত রাখার পিছনে শাসকের দিকেই আঙুল তুলেছে প্রধান বিরোধীদল বিজেপি। তৃণমূলকে
কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন চাকদা বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক বঙ্কিম ঘোষও।
তিনি জানান, “চাকদা বোমা বারুদের স্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে। বোমা বারুদের
স্তূপে দাঁড়িয়ে গোটা বাংলা। গোটা বাংলাকে অশান্ত করে তুলেছে শাসক দল তৃণমূল।
শাসকদলের আশ্রিত সমাজবিরোধীরা চাকদাকে প্রতিনিয়ত অশান্ত করে তুলেছে”, অভিযোগ নদীয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন
কংসবণিকের।
অভিযোগ অস্বীকার করেছে শাসক দল তৃণমূল।
পাল্টা চাকদা শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি দেবকৃষ্ণ মজুমদার বলেন, “চাকদা শান্ত এলাকা। একটি ঘটনা ঘটেছে। কে বা কারা এর সঙ্গে
যুক্ত পুলিশ দক্ষতার সঙ্গে তার তদন্ত করছে”।
অন্যদিকে খবর পেয়ে দুপুর ১ টা ৩০ মিনিট
নাগাদ চাকদা থানার অন্তর্গত লালপুর সাহেবপুকুর এলাকায় বোমা বিষ্ফোরণের ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের
বিজেপির সাংসদ তথা আসন্ন ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের
বিজেপি প্রার্থী জগন্নাথ সরকার। সঙ্গে ছিলেন চাকদা বিধানসভার বিধায়ক বঙ্কিম ঘোষ। এলাকা
পরিদর্শনের পর সংবাদমাধ্যমের সামনে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে সংসদ জগন্নাথ সরকার
বললেন, “এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হোক আমরা চাই। দোষীদের
চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক। কিন্তু আমরা জানি পুলিশ প্রশাসন তা
করবে না। কারণ শাসকের হয়ে কাজ করছে এ রাজ্যের পুলিশ প্রশাসন”।
সবশেষ পাওয়া খবর, বুধবার ঘটনাস্থলে আসে বোম স্কোয়াডের কর্মীরা। ঘটনাস্থল
খতিয়ে দেখেন তারা। তাদেরকে দেখে কিছুটা হলেও স্বস্তি পায় এলাকার মানুষ। এরপর
শুরু হয় উদ্ধার হওয়া বোমাগুলি নিষ্ক্রিয় করার কাজ।