ব্রেন টিউমারকে হার মানিয়ে ফের
ট্র্যাকে ফিরলেন মুম্বই ম্যারাথনে ব্রোঞ্জ জয় অ্যাথলিট শ্যামলী সিং। মারণরোগ ব্রেন
টিউমারের কাছেও হেরে যাননি। থেমে যাননি রানিগঞ্জের বাসিন্দা
বাংলার অ্যাথেলিট শ্যামলী সিং। বরং ব্রেন টিউমারের জটিল
অস্ত্রোপচারের পরেও স্বাভাবিক বাকশক্তি হারিয়েও মনের জোরে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তিনি।
ট্র্যাকে ফিরেছেন। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া মুম্বই ম্যারাথনে ৪২ কিলোমিটার দৌড়ে ৩৩
বছরের শ্যামলী সিং ব্রোঞ্জ জয় করে ফিরেছেন।
বর্তমানে শ্যামলী ও তার স্বামী তথা কোচ
রানিগঞ্জের কুনুস্তরিয়ার কাঁটামোড় এলাকার বাসিন্দা। সাধারণ এক চিলতে বাড়ি। স্বামীর
কোচিং থেকে সামান্য কিছু আয়। আর নিজের জেতা পুরস্কারের
অর্থে চলে সংসার। আর সঙ্গে চলছে অনুশীলন। কিন্তু, সন্তোষ সিং
বলেন,“অনুশীলনের জন্য ভালো মাঠ নেই।
রানিগঞ্জ থেকে বেশ খানিকটা দূরে মেজিয়া, শুশুনিয়া পাহাড় এলাকায়
অনুশীলন করছে অ্যাথলিট শ্যামলী সিং। তিনি বলেন আর তাঁর এই একাগ্র চিত্তে দৌড় এনে
দিয়েছে একাধিক সফলতা। জানা গেছে কলকাতা ম্যারাথনে প্রথম
হয়েছিলেন। মুম্বই, ওড়িশা-সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ম্যারাথন
দৌড়ে প্রথম তিনের মধ্যে স্থান ছিনিয়ে নিয়েছেন তিনি।
আন্তর্জাতিক স্তরে থাইল্যান্ডেও প্রথম দশে উঠে এসেছেন শ্যামলী। পশ্চিম মেদিনীপুরের
দরিদ্র আদিবাসী পরিবারের মেয়ে শ্যামলী। ছোট বেলা থেকেই ছুটতেন। জেলা ও রাজ্য স্তরের প্রতিযোগিতাগুলিতে বরাবর সফল হওয়ায়
সবার নজরে আসেন শ্যামলী। কিন্তু, দরিদ্র
আদিবাসী পরিবারের মেয়ে হওয়ায় তেমনভাবে কোচিং বা ডায়েট কিছুই পাননি। এরই মাঝে তাঁর আলাপ হয় আরেক অ্যাথেলিট সন্তোষ সিংয়ের সঙ্গে। সন্তোষ তাঁর কোচ হয়ে ওঠেন। তবে, শুধু ট্র্যাকের নয়। জীবন যুদ্ধেও পাশে পান সন্তোষকে। প্রথমে ভালোবাসা তারপর বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন দু’জন।
স্ত্রীকে সফল অ্যাথেলিট করতে নিজে প্রতিযোগিতায় নামা ছেড়ে দেন সন্তোষ। শ্যামলী
জানান সবকিছুই ঠিকঠাক ভাবে চলছিল। একচিলতে বাড়িতে জমছিল পদকের পাহাড়। কিন্তু হঠাৎ
অন্ধকার। ট্র্যাকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। প্রায় ৪ বছর আগে মুম্বইয়ে ৪২ কিলোমিটার
টাটা ম্যারাথনে অংশ নিয়েই অসুস্থ হয়ে পড়েন। ট্র্যাকেই বমি করতে শুরু করেন । তবুও হাল ছাড়েননি। দৌড় শেষ করেন। তারপর থেকে দৌড়াতে গেলেই বমি পেত তাঁর,
মাথা ঘুরত। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ধরা পড়ে
তাঁর ব্রেন টিউমার। রোগের চিকিৎসার খরচ শুনেই চোখ কপালে ওঠে।
কিন্তু, আসানসোলের বেশ কিছু ক্লাব ও সংগঠন তাঁদের পাশে
দাঁড়ায়। চেন্নাইয়ের একটি বড় হাসপাতালে অস্ত্রোপচার হয়
শ্যামলীর। প্রায় ১২ ঘণ্টার জটিল অস্ত্রোপচার হয় শ্যামলীর
মস্তিষ্কের। যার ফলে স্বাভাবিক বাকশক্তি হারান তিনি। কিন্তু, মনের জোরে সেই কঠিন সময়ের সঙ্গে লড়াই করে
পুনরায় ট্র্যাকে ফেরেন শ্যামলী সিং। স্বাভাবিক জীবনে পুরোপুরি
ছন্দে ফিরতে তাঁর সময় লাগবে। কিন্তু, দৌড়ের
ছন্দে ফিরেছেন তিনি। মুম্বইয়ে ম্যারাথন দৌড়ে শ্যামলী তৃতীয় স্থানে শেষ করে
ব্রোঞ্জ পদক জিতেছেন। তাঁর আগামীদিনে
লক্ষ্য এশিয়ান গেমস কিংবা অলিম্পিকসে অংশগ্রহণ করা। কিন্তু, শ্যামলী এবং তাঁর স্বামী সন্তোষ সিং জানিয়েছেন, এই
দৌড়ের জন্য বিশেষ ডায়েট ও সাপ্লিমেন্টের প্রয়োজন। আরও অনেক
কিছু আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রের প্রয়োজন। তার ব্যয়ভার বহন করার মতো অর্থ তাদের কাছে
নেই। কোচিং করিয়ে স্বামী সন্তোষ সামান্য আয় করেন। আর শ্যামলী
যা পুরস্কার মূল্য পান, তাতেই অ্যাসবেস্টাসের ভাড়া বাড়িতে
তাঁদের দারিদ্রতার সংসার। জয়ের পদক, ট্রফি রাখার সেল্ফ তো
দূরের কথা, বাড়িতে শৌচাগার পর্যন্ত নেই। তাই তাঁদের কাতর আহ্বান, যদি কোনও সহৃদয় মানুষ বা
সংগঠন তাদের পাশে থাকেন। অথবা সরকার তাঁদের সাহায্য করেন। তাহলে আন্তজার্তিক স্তরে বড় প্রতিযোগিতায় দেশের জন্য সোনা জয় করে আনবেন
শ্যামলী। ফের ম্যারাথনে ফিরতে পেরে যাবতীয় কৃতিত্ব স্বামীকেই দিচ্ছেন শ্যামলী।
তাঁর স্বপ্ন ভাঙতে দেননি সন্তোষ।