২৪ ঘণ্টায় শিলিগুড়ি শহরে ২০লক্ষ টাকার সাইবার
প্রতারনা। সাইবার ফ্রডস্টারদের থাবায় সেনা কর্মীরা। ৭ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা খোঁয়ালেন
সেনা জওয়ান। সিবিআইয়ের ভয় দেখিয়ে মহারাষ্ট্র
পুলিশের পরিচয় দিয়ে সক্রিয় চক্রের থাবায় শিলিগুড়ি শহরে অবসরপ্রাপ্ত উইং
কমান্ডারের অ্যাকাউন্ট থেকে ১৩ লক্ষ টাকা হাপিস। শিলিগুড়ি শহরে থাবা বসিয়েছে
ফ্রডস্টারের। বিগত বেশ কয়েকদিন আগেই এক সপ্তাহে দেড় কোটি টাকার সাইবার প্রতারণার
অভিযোগ সামনে আসে। এবারে রেকর্ড কে ভেঙে ২৪ ঘন্টায় সাইবার প্রতারণা চক্রের
টার্গেট করে দুই সেনা কর্মীর কাছ থেকে ২০লক্ষ টাকা আত্মসাৎ। শিলিগুড়ি মাটিগাড়া
ব্লকের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত বায়ু সেনার উইঙ কমান্ডেন্ট শ্যামল কান্তি নন্দী।
কমান্ডেন্ট শ্যামল কান্তি নন্দীর অভিযোগ গত 6 মার্চ তার
মোবাইলে একটি ফোন আসে অচেনা নম্বর থেকে। ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে এক মহিলা কণ্ঠ
স্বরে জানানো হয় অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মীকে তিনি টেলিকম ডিপার্টমেন্ট থেকে বলছেন।
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মীর নামে একটি মোবাইল নম্বর বেআইনিভাবে অপরাধজনিত কাজে
ব্যবহার করা হচ্ছে। সে কারণে তার সমস্ত টেলিফোন নম্বরগুলি কে ব্লক করে দেয়া হবে।
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মী জানান এ বিষয়টি শুনেই আঁতকে ওঠেন তিনি। এরপরই ওই মহিলা
কণ্ঠস্বর তাকে জানায় তার ফোন নম্বরটি নোটিফিকেশন বিভাগে দেওয়া হচ্ছে সেখান থেকে
তাকে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হবে। এরপরই ট্রাই-এর নোটিফিকেশন বিভাগের কর্মী পরিচয়
দিয়ে এক পুরুষ কণ্ঠে তাকে জানানো হয় তার নামে একটি নম্বর নিয়ে মুম্বাইয়ের
পারলে থানার অন্তর্গত তিলক নগরে কেউ অপরাজনিত কাজে ব্যবহার করছেন। মহারাষ্ট্রের
পুলিশের কাছে এ বিষয়ে একটি অভিযোগও দাখিল হয়েছে। তার ভিত্তিতেই তদন্ত নেমে তার
নামে থাকা সমস্ত নম্বর গুলো ব্লক করে
দেওয়ার নির্দেশ এসেছে।
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মী জানান সে সময় আমি ফোনে
জানিয়েছিলাম এ ধরনের কোনো নম্বর তিনি কখনোই ব্যবহার করেননি। তবে অপর দিক থেকে তাকে
জানানো হয় তাকে তৎক্ষণাৎ মুম্বাইয়ের পারলে থানায় যোগাযোগ করতে হবে সশরীরে অথবা
দুই ঘণ্টার মধ্যে তার সমস্ত ফোন নম্বরগুলি ব্লক করে দেওয়া হবে।
গ্যাং ব্যবহার করছে মুম্বাইতে। এরপরই তিনি
আকুতি করেন তিনি মুম্বাই থেকে দূরে রয়েছেন কোনভাবেই সেখানে স্বশরীরে পৌঁছানো
একদিনের মাথায় সম্ভব নয়। এরপরই চক্রের আসল খেলা শুরু হয়। ফ্রডস্টার অবসরপ্রাপ্ত
সেনা কর্মীকে জানান তিনি তার সঙ্গে মুম্বাইয়ের সাইবার দলের মধ্যে পারলে থানার
সঙ্গে যোগাযোগ করে দিতে পারবেন। তার বলা নির্দেশ অনুসরণ করে অবসরপ্রাপ্ত সেনা
কর্মী।। অভিযোগ এরপরই মহারাষ্ট্র পুলিশের পারলে থানার পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি তার
সঙ্গে কথা বলেন এবং তাকে স্কাইপ একাউন্ট খুলে ভিডিও কলের আসতে হবে বলে নির্দেশ
দেন। সে নির্দেশ অনুসরণ করে স্কাইপ একাউন্ট খুলে তিনি অপরপ্রান্তে মুম্বাই পুলিশ
২০৮ এবং সিআইডি উল্লেখ্য একটি আইডি স্কাইপে প্রেরণ করেন তাকে সেখানে যুক্ত হওয়ার
জন্য। সেমতো অবসরপ্রাপ্ত সেনাপতি ভিডিও কলে সেখানে যুক্ত হয়ে তার কাছ থেকে তার
আধার কার্ড চাওয়া হয়। আধার কার্ড যাচাই করে অপরপ্রান্তে বসে থাকা ব্যক্তি তাকে
জানান তার নামে সিবিআইএর অর্থ তছরূপের মামলা রয়েছে। এরপরই অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মী
ঘাবড়ে যান। এরপর ফ্রডস্টারদের নির্দেশ অনুসারে তাদের বলা কথা মতো কাজ করতে শুরু
করেন তিনি। কখনো তার নম্বর সিআইডি ঊর্ধ্বতন আধিকারিকের সঙ্গে কানেক্ট করার কথা বলা
হয় আবার কখনো দিল্লি সিবিআই অফিসারের সঙ্গে তার সংযোগ স্থাপন করা হচ্ছে বলে
জানানো হয়। এরপরই দিল্লি সিবিআই অফিসারের পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি তাকে জানান তার
নামই যে অর্থের মামলা রয়েছে ইতিমধ্যেই সেই মামলায় একজনকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই।
সুপ্রিম কোর্টে একটি ভুয়ো নথি ও তার সামনে পেশ করা হয় এবং তার একটি অনলাইন লিঙ্কও
দেওয়া হয়ে থাকে। সে অনলাইন লিঙ্ক ধরে তাকে জানানো হয় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ
মতোই তার অ্যাকাউন্ট থেকে সমস্ত টাকা ফ্রিজ করে দেওয়া হবে। সুতরাং তদন্তের
স্বার্থে আপাদত তার ব্যাংক একাউন্ট থেকে অন্য একটি ব্রাঞ্চের ব্যাংক একাউন্টে তার
অর্থ স্থানান্তরিত করা হবে। তিন দিনের মধ্যে অর্থ ফেরত দেওয়া হবে তদন্ত সম্পন্ন
হলে। তাদের প্রস্তাবে রাজি হতেই তার একাউন্টে থাকা ১৩ লক্ষ টাকা হরফ করে নেয়
সাইবার প্রতারকেরা। পরবর্তীতে বিষয়টি বুঝতে পেরে শিলিগুড়ি সাইবার থানার ব্যবস্থা
হন বায়ু সেনার অবসরপ্রাপ্ত উইং কমান্ডেন্ট। সাইবার থানায় ৬ মার্চ মামলা দায়ের
করা হয়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে
পুলিশের তরফে। অন্যদিকে অপর একটি সেনা কর্মীকেও একইভাবে হোয়াটসঅ্যাপে অপরিচিত
নম্বর থেকে ফোন করে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে থাকা ওটিপির মাধ্যমে ৭ লক্ষ ৬০ হাজার
টাকা হাপিস করা হয়েছে। একই দিনে ঐ সেনা জওয়ান চন্দ্র বাহাদুর গুরুং সাইবার থানায়
অভিযোগ দায়ের করেছেন। শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারের সাইবার থানার তরফে তদন্ত শুরু
করা হয়েছে।