নিউজ ডেস্ক: কলকাতা ঐতিহ্যের শহর। হাজার হাজার পুরনো বাড়ি এখনও দাঁড়িয়ে কলকাতার বুকে। তবে যত দিন যাচ্ছে সেই সব পুরনো বাড়ি হয়ে উঠছে বিপদজনক। অন্যদিকে বেয়াইনি ভাবে জলাশয় বুজিয়ে গজিয়ে ওঠা বহুতল গুলোও ঘুম উড়িয়েছে কলকাতাবাসীর। পর পর একই ঘটনা। বারবার সামনে আসছে বহুতল বিপর্যয়ের ঘটনা। কিন্তু তাও টনক নড়ছেনা প্রশাসনের। সরকারের চোখের সামনেই পর পর গজিয়ে উঠছে বেয়াইনি বহুতল। আর যার জন্য জীবন বলি দিচ্ছে সাধারন মানুষ।
রবিবার মধ্যরাতেই এমন ঘটনার সাক্ষী থাকল গার্ডেনরিচের ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। এখনও পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী নির্মীয়মান বহুতল ভেঙে পড়ে মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের। আহত বহু। জানা গেছে জলাজমি বুঝিয়ে তৈরি হচ্ছিল বহুতল। মধ্যরাতে এক বিকট শব্দে কিছু বুঝে ওঠার আগেই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে ওই বহুতল। রাতে ঘুমের মধ্যেই ধ্বংসস্তুপে চাপা পড়েন অনেকে। বহুতলের আশপাশে ছিল প্রচুর ঝুপড়ি। নির্মীয়মাণ বহুতলটি ভেঙে পড়েছে সেই ঝুপড়িগুলির উপরেই।
গার্ডেনরিচে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একতলা বা দোতলার অনুমতি নিয়ে আট থেকে ন’তলা বাড়ি তৈরি করা হচ্ছে। সবটাই স্থানীয় পুরপ্রতিনিধিদের সামনে ঘটছে বলে অভিযোগ।এমন ঘটনা যদিও নতুন নয়। এর আগেও এই একই ঘটনার সাক্ষী থেকেছে দক্ষিণ কলকাতার দেশপ্রাণ শাসমল রোডের এলাকাবাসীরা। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আচমকাই এক যুবকের উপরে ভেঙে পড়ে ওই এলাকার পুরনো বাড়ির একাংশ। এরপরেই তড়িঘড়ি তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অন্যদিকে কয়েক ঘণ্টা টানা বৃষ্টি হলেই পুরনো বাড়ি ভেঙে পড়ার একাধিক ঘটনা ঘটছে শহরে। তাতে কখনও ভাঙা অংশের নীচে চাপা পড়ে বাড়ির বাসিন্দাদের মৃত্যু হচ্ছে, কখনও ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হচ্ছে। এমন পুরনো বাড়ির সামনে দিয়ে যাতায়াত করার সময়ে অনেকে আহত হচ্ছেন বা মারাও যাচ্ছেন। কিন্তু এতেও টনক নড়ছেনা সরকারের।
এছাড়াও আগের বছর জুন মাসে গিরিশ পার্কের বলরাম দে স্ট্রিটে পুরনো বাড়ির একাংশ ভেঙে বিপত্তি হয়। পুরনো বাড়ির বিপজ্জনক অংশ পুরসভার কর্মীরা ভাঙার সময় ওই বিপত্তি ঘটে। সেসময় পুরনো বাড়ির একাংশ ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাশের বাড়ির একাংশও। পাশাপাশি ২০২২ সালে পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর 2 নং ব্লকের রানিচক গ্রাম পঞ্চায়েতের রানিচক দক্ষিণ পাড়ায় হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে একটি নির্মীয়মাণ পাকা বাড়ি।
ফলে এটা স্পষ্ট যে বারংবার একই ঘটনায় বলি হচ্ছে সাধারন মানুষ। কিন্তু সরকারের মুখে কুলূপ।
প্রসঙ্গত, রবিরারের ঘটনায় মৃতদের পরিবারকে ৫ লক্ষ এবং আহতদের ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েই দায় সারছে সরকার। উপরুন্ত ক্ষমতায় আসার ১৩ বছর পরেও ঘটনার দায় বাম আমলের উপর চাপালেন মেয়র ও পুর-নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তাঁর দাবি, বাম জমানা থেকেই ওই এলাকায় বেআইনি নির্মাণের প্রবণতা তৈরি হয়েছে। তাই তৃণমূল সরকার ও তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার তরফে নানা পদক্ষেপ নেওয়া সত্ত্বেও বেআইনি নির্মাণ করা থামেনি।
পাশাপাশি বাম আমলকে দুষেও, স্বীকার করলেন নজরদারির অভাব ছিল পুরসভার তরফেও। দায় চাপালেন পুরসভার আধিকারিকদের ঘাড়ে।