ভারতবর্ষে সমস্ত প্রান্তে হোলি খেলা হয়। জলে রঙ গুলে ও আবির দিয়ে হোলি খেলার প্রথা রয়েছে । দেশের নানান
প্রান্তে নানা ভাবে হোলি খেলার প্রথা রয়েছে। মথুরার লঠমার হোলী থেকে বিহারের
কীচর গোবর হোলী। তবে উত্তরপ্রদেশের এমন একটি জায়গা রয়েছে যেখানে
শ্মশানের চিতার ছাই দিয়ে হোলি খেলার পরম্পরা রয়েছে। এই
স্থানটি হল কাশীর মণিকর্ণিকা ঘাট। এখানে সারাক্ষণ মৃত ব্যক্তির চিতা জ্বলতে থাকে এবং চিতার ছাই নানান কাজে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু তা দিয়ে হোলি খেলা
হয় এটা অনেকেরই অজানা।
কাশীকে ভগবান
শিবের বাসস্থান বলে মনে করা হয়।পৌরাণিক মতে দেবী পার্বতীকে বিবাহ করার পর ভগবান শিব তাকে কাশী নিয়ে এসেছিলেন। যেদিন তিনি মাতা পার্বতীকে কাশী নিয়ে এসেছিলেন সেই দিন রংভরি একাদশী পালিত
হয়। ভগবান শিবের বিবাহের আনন্দে মনিকার্নিকা ঘাটে ভগবান
শিবের সঙ্গী (শিবগণ) এবং ভূত-প্রেতরা শ্মশানের চিতা ভস্ম
দিয়ে হোলি খেলেছিল এবং সেই উৎসবে স্বয়ং ভগবান শিব উপস্থিত হয়েছিলেন। তখন থেকেই
প্রতিবছর এই দিনটিতে “মসান হোলি” খেলা হয়। মানুষের বিশ্বাস আজও শিব ঠাকুর এখানে অন্য রূপে হাজির হন। চলতি বছর এই মসান হোলি ২১ মার্চ বৃহস্পতিবার খেলা হয়।
কাশীর মানিকর্ণিকা ঘাট খুবই প্রাচীন। বহু পুরাণ ও উপনিষদে এই ঘাটের বর্ণনা পাওয়া যায়। পৌরাণিক গ্রন্থ অনুসারে একবার দেবী পার্বতীর কর্ণফুল এখানকার কোন একটি কুণ্ডে
পড়ে গিয়েছিল। পরে শিব ঠাকুর সেটি খুঁজে বের
করেন। দেবী পার্বতীর কানের দুল এখানে
পতিত হওয়ার কারণে এই ঘাটের নাম মণিকর্ণিকা রাখা হয়। অপর
একটি মান্যতা অনুসারে এই স্থানে মহাদেব দেবী সতীর
অগ্নিসংস্কার করেছিলেন। সেই কারণে এই জায়গাটিকে মহাশ্মশান বলা হয়।
কাশীর মণিকর্ণিকা
ঘাটে চিতাভস্ম দিয়ে হোলি খেলার নেপথ্যে একটি আধ্যাত্মিক রহস্য লুকিয়ে আছে। ধর্মগ্রন্থ
অনুসারে এই সংসার নশ্বর অর্থাৎ এই সংসারের প্রত্যেক বস্তু
কোন না কোন একদিন নষ্ট হয়ে মাটিতে মিশে যাবে। প্রত্যেক প্রাণী যার জন্ম আছে তার মৃত্যু হবেই।
ভস্ম হোলি খেলার অর্থ এই সংসারের লৌকিক বিষয়ে বেশি মোহ রাখা উচিত
নয়। সবই একদিন ছাই হয়ে যাবে। আবার পুনর্জন্ম
হবে যদি না মোহমায়ার চক্র থেকে বের হওয়া যায়।