হেরোইন বিক্রি বন্ধ করতে
হবে। এই দাবিতে থানার গেটের সামনে বিক্ষোভ দেখালেন প্রমীলা বাহিনী। শুধু তাই নয় এক হেরোইন বিক্রেতাকে ধরে পুলিশের হাতে তুলেও দিলেন তারা।
প্রমীলাবাহিনীর দাবি তাদের সংসার ধ্বংস
হয়ে গেছে স্বামীদের হেরোইন আসক্তির
কারনে। বাধ্য হয়ে তারা বিভিন্ন গ্রামের ভুক্তভোগী মহিলারা এক হয়ে হেরোইন বিক্রির দোকান তুলে দেওয়ার দাবীতে একত্র হয়েছেন। থানার গেটে মহিলারা
বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। মিনা বিবি’র দাবি পুলিশ হেরোইন
বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা না নিলে বিষ খেয়ে মরতে হবে। তিনি জানান “ ক’দিন
বাদে তাঁদের ধর্মীয় উৎসব অথচ ছেলেমেয়েদের নতুন পোশাক আশাক
কেনার ব্যাবস্থা হল না। বাড়িতে চাল ডালের সংস্থান নেই। কিন্তু ঘটিবাটি বেচে হেরোইন
খাওয়া অব্যাহত আছে স্বামীর। এভাবে আর চলা যাচ্ছে না। তাই রস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছেন।”
তাদের বক্তব্য ‘না
থাকবে বাঁশ না বাজবে বাঁশি।’ অর্থাৎ দোকান উঠে গেলে বাড়ির
পুরুষেরাও নেশার বস্তু হাতের কাছে না পেয়ে সংযত হবে। সোমবার সকালের দিকে থানার
গেটে বিক্ষোভের ওই ঘটনাটি ঘটেছে মুর্শিদাবাদের রানিনগর থানার সামনে। জানা গিয়েছে
থানায় বিক্ষোভের আগে ওই প্রমীলা বাহিনীশেখপাড়া বাজারে এক হেরোইন বিক্রেতার দোকানে চড়াও হয়ে তাকে ধরে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন। পরে
থানায় তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। জানা গিয়েছে ধৃত হেরোইন
বিক্রেতার নাম মানু শেখ (৪০)। তার বাড়ি মালিপাড়ায়। প্রমীলা বাহিনীর বিক্ষোভের ঘটনায় পুলিশ দ্রুত ছুটে আসে ও তাদের
সমস্যার কথা শোনেন। মহিলাদের তরফে জোরালো প্রশ্ন করা হয় শেখপাড়া,
নবিপুর, বধুরপাড়ার মোড়, শেখপাড়া পলিটেকনিক পাড়া জায়গা গুলি সদর এলাকা। অথচ ওই সব জায়গায় বছরের পর
বছর বিক্রেতারা হেরোইন বিক্রি করছে কি ভাবে ? পুলিশ কোনও
ব্যাবস্থা নেয় না কেন?
পুলিশের তরফে জানানো হয় ব্যাবস্থা নেওয়া হয় না
এই অভিযোগ ঠিক নয়। কারন দু’দিন আগেও এক বিক্রেতা ধরা পড়ার পর জামিনে ছাড়া পেয়েছে। সে কথা স্বীকার করেন মহিলারা। তারা বলেন,“জানি মাঝে মধ্যে দু একজন বিক্রেতাকে ধরা হয়।
কিন্তু দু’চারদিনের বেশী তাদের জেলে আটকে রাখা হয় না।” ওই উত্তরে পুলিশও বিব্রত বোধ করে। জানায় আটকে রাখার মতো হেরোইন না পাওয়ার জন্যই
তারা দ্রুত ছাড়া পেয়ে যায়।
এদিকে স্বামীদের হেরোইনের নেশায় ক্ষতিগ্রস্ত
নন্দিরভাটা গ্রামের সাবিনা বিবি , বধূরপাড়ার হাবিবা খাতুন,
মালীপাড়ার বিলকিস বিবি’রা জানান “ আমরা শেষ হয়ে গেলাম। ছাগল,
গরু তো বাড়িতে পোশাই যাচ্ছে না! তার সঙ্গে বিয়ের সময়ে দেওয়া গয়না,
ঘটি বাটি সব বিক্রি হয়ে গিয়েছে। দুঃখের কথা কি বলব হাঁড়িতে থাকা রান্নার চাল ডাল, পর্যন্ত বিক্রি করে দেয়
স্বামী। বাঁধা দিলে হেঁসো, লাঠি দিয়ে মারধর করে।” হাবিবা
খাতুন জানান “ অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ক’দিন ধরে বাবার বাড়ি চলে গিয়েছি।” মহিলাদের
ওই আন্দোলনকে সমর্থন করেন শেখপাড়া বাজার ব্যাবসায়ী সমিতির সম্পাদক আব্দুল মোমিন ।
তিনি জানান “ এর আগে অনেকবার পুলিশ প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। দু’চারদিন পর আবার যে কে সেই অবস্থা হয়ে যায়। তাই আর কিছু বলা হয় না।” খানিকটা বিরক্ত
প্রকাশ করেন তিনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান “ হারুডাঙ্গা, দুর্গাপুর, বর্ডারপাড়ার চরে কোন মুদিখানা দোকানে মদ
বিক্রি হয় তা জানতে পারে পুলিশ , আর বছরের পর বছর শেখপাড়ায়,
নবিপুরে, বধূরপাড়ার মোড় অথবা শেখপাড়া পাথর
গ্যারেজে হেরোইন বিক্রি হয় জানতে পারে না এটা বিশ্বাস করতে হবে!” যদিও পুলিশ জানায়
তারা বিষয়গুলি জানেন। কিন্তু মাদক মামলায় বেশীদিন জেলে রাখার মতো হেরোইন পাওয়া যায়
না। তাই ছাড়া পেয়ে যায় অভিযুক্তরা।