চাকদহ শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নরেন্দ্রপল্লী থেকে উত্তর প্রদেশের নয়ডায় চাকরি করতে গিয়েছিলেন পরিবারের একমাত্র মেয়ে। সেখানেই ওই তরুনীর রহস্য মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এই বিষয়ে যোগী রাজ্যের পুলিসের দারে দারে ঘুরে বিচার না পেয়ে হতাশার নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন তরুণীর বাবা-মা। মৃত ওই তরুণীর নাম সায়নী দাস (২৫)। পরিবারের অভিযোগ, নয়ডার আবাসনের একটি ফ্ল্যাটে মেয়েকে খুন করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের তীর ওই তরুণীর পরিচিত তিন যুবকের বিরুদ্ধে। তার মধ্যে দু’জন এলাকার প্রভাবশালী বলে পরিচিত। সোমবার চাকদহের বাড়িতে সায়নীর শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। নিজের মেয়ের শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান করার ফাঁকে তাঁর বাবা শান্তনু দাস বলেন, মেয়ের মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী তাদের কঠোর শাস্তি চাই আমরা। কিন্তু নয়ডা পুলিস কোনভাবেই সহযোগিতা করছে না। অন্যদিকে নয়ডা পুলিস ওই পরিবারকে জানিয়েছে, তদন্ত করা হয়েছে। এক যুবককে থানায় এনে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে। কিন্তু তার কোন ফল্ট পাওয়া যায়নি।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতা থেকে বিবিএ পাশ করে গত বছর জুলাই মাসে নয়ডায় একটি বহুজাতিক সংস্থার কাজে যোগ দেন সায়নী। স্পষ্টবাদী মেয়ে সায়নী সেখানে গৌতম বুদ্ধনগরের একটি আবাসনের ১৮ তলায় ফ্ল্যাট ভাড়া নেন। সেখান থেকে গত ২০ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় তাঁদের ইনস্টিটিউটের একটি অনুষ্ঠানে আসেন তিনি। সেখান থেকে চাকদাহের বাড়িতে ফেরার কথা থাকলেও অফিসের কাজ থাকায় পরের দিন ভোরের বিমানে তিনি নয়ডায় ফিরে যান। অভিযোগ ওই দিন রাতেই অর্থাৎ ২১ ফেব্রুয়ারি ফ্ল্যাট থেকে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। পরের দিন পরিবারের কাছে খবর আসেল তাঁরা ২৩ তারিখ নয়ডায় পৌঁছে যান। পরিবারের দাবি মেয়ের মৃতদেহের অবস্থান দেখে কোনোভাবেই মনে হচ্ছিল না সেটা আত্মহত্যা। ফ্ল্যাটের মূল দরজাও খোলা ছিল। এমনকি পুলিস ঠিকমত তদন্ত পর্যন্ত করেনি। এরপর থেকে মেয়ের বিচার চেয়ে নয়ডার বিভিন্ন জায়গায় প্রায় একমাস ধরে ঘুরে বেড়ান তাঁর বাবা-মা। পরে একপ্রকার হতাশ হয়ে তাঁরা চাকদহে ফিরে আসেন গত ১৯ মার্চ।
শান্তনু বাবু বলেন, ঘটনার পর ফ্ল্যাটের সিসিটিভি ফুটেজ পুলিস নেয়নি। আমি গিয়ে সেটা তাদের দিয়েছি। মেয়ের পরিচিত ওই তিন যুবককে ফ্ল্যাট থেকে ঘটনার পর হাতে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যেতে দেখা যায় সিসিটিভিতে। এমনকি ঘটনার পর ওই তিন যুবক নয়ডার চাকরি এবং বাসস্থান পর্যন্ত ছেড়ে দেয়। এগুলি জানানোর পরেও পুলিস কোন পদক্ষেপ নেয়নি। পরে জানানো হয় আপনারা ফিরে যান হোয়াটসঅ্যাপে অভিযোগ পাঠিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু সেটাও এদিন পর্যন্ত আসেনি। সেখানকার এক পুলিসের আধিকারিককে ফোনে বলতেও শোনা যায় আমরা কমজোরী লোক আছি। আমরা সেখানকার এমপি ও এমএলএকেও জানাই। তাতেও কাজ হয়নি। তরুণীর মা পাপিয়া দাস বলেন, কলকাতায় থাকতে মেয়ে মাঝেমধ্যে নাইট ক্লাব যেত। কিন্তু নয়ডাতে যেত না। কারণ বলতো ওখানকার পরিস্থিতি ভালো না। এছাড়াও তার ফ্ল্যাটের নিরাপত্তা রক্ষীরা আমাদের হাল ছাড়তে বারণ করেছেন। তারা জানিয়েছেন এই ধরনের ঘটনা এর আগেও ওখানে হয়েছে। আমার মেয়ের কোন মানসিক চাপ বা কারোর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল না। আমরা দোষীদের শাস্তি চাই।