নিউজ ডেস্ক: ২৫,৭৫৩ জনের চাকরি গেল একসঙ্গে। ঢাকি সমেত বিসর্জন কি একেই বলে? ফেসবুকে একথা ছড়িয়ে পড়েছে ভাইরাল গতিতে। সাম্প্রতিক কালে এত সংখ্যক সরকারী কর্মচারির দুর্নীতির (Recruitment Scam) অভিযোগে চাকরি যাওয়া নজিরবিহীন। এরই মাঝে চাকরি যাওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে দায়ী করে তাঁর পদত্যাগ দাবি করলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।
বালুরঘাটে (Balurghat) তীব্র দাবদাহ উপেক্ষা করে চলছে প্রচার। প্রচারের ফাঁকে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে সুকান্ত (Sukanta Majumdar) বলেন, “ তৃণমূল কংগ্রেসের আমলে মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায় মাস্টার মশাইদের চাকরি গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগির মত বিক্রি হয়েছে। তার ফল আজ এই পরিবারগুলোকে ভুগতে হচ্ছে। ২৬ হাজার পরিবার অথৈ জলে পড়ে গেল। ক্যাবিনেটের শীর্ষে থাকা মুখ্যমন্ত্রীকে (CM) এর দায় নিতে হবে। মুখ্যমন্ত্রীর অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত। তিনি এই পদে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ অন্ধকারের দিকে যাচ্ছে এবং পশ্চিমবঙ্গকে এই অন্ধকার থেকে বের করে আনতে হবে।”
একসঙ্গে প্রায় ২৬ হাজার সরকারি কর্মচারির চাকরি গেল। যার মধ্যে বেশিরভাগ শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী। এর প্রভাব পড়বে ছাত্রদের পড়াশুনায়। প্রভাব পড়বে সমাজেও। স্বাভাবিকভাবে চাপে শাসকদল। চাপে শিক্ষাদফতর। এরই মাঝে প্রতিক্রিয়া এসেছে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর তরফে। ব্রাত্য বসু বলেন, “রায়ের কপি হাতে পাইনি। তবে রায়ের কপি হাতে পেলে আরো বিস্তৃতভাবে বলতে পারব। এসএসসির কর্তাদের সঙ্গে আমার প্রাথমিক কথা হয়েছে। তাদের দেওয়া রিপোর্ট থেকে আমি বলতে পারি প্রায় চার থেকে পাঁচ হাজার শিক্ষক এবং অশিক্ষক কর্মচারীর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ ছিল।
প্রায় ২৬ হাজার লোকের চাকরি গেল অর্থাৎ যারা যোগ্য এরকম প্রায় ১৯ হাজার, তাদেরও চাকরি চলে গেছে। অথচ এসএসসি কেই মাননীয় বিচারপতি বলছেন টেন্ডার প্রক্রিয়া ডেকে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করতে এবং যে ওএমআর শিট আছে সেগুলো নতুন করে যাচাই করতে। আমরা আইনি পরামর্শ নেব যে আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারি কি না। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে বলতে পারি প্রায় ১৯ হাজার জনের যদি চাকরি চলে যায় তাহলে সেটা একজন জন প্রতিনিধি হিসেবে চিন্তার বলে আমি মনে করি এবং যেভাবে বিজেপির নেতারা যোগ্য মানুষদের চাকরি যাওয়াতে আনন্দ প্রকাশ করছে সেটা সমাজের পক্ষে এবং যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের পক্ষে খুবই বেদনার বলে আমরা মনে করি।
এক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে যে পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতি হয়েছে এদিনের হাইকোর্টের রায়ের ফল তাতে সিলমোহর পড়ল। এই রায় ঐতিহাসিক বলছে ওয়াকিবহাল মহল। এবং অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় যে ঢাকি সমেত বিসর্জন ও দুর্নীতির কথা বলে আসছিলেন সেই তত্বই পুনরায় প্রতিষ্ঠিত। এর প্রভাব পড়বে আসন্ন নির্বাচনেও। যদিও তা মানতে রাজি নন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি এপ্রসঙ্গে বলেছেন, “ আসলে নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে না। যারা যোগ্য তাদের বের করে দিয়ে নতুন করে পরীক্ষা হবে তা না করে অযোগ্যদের বাদ দিয়ে আমরা নিয়োগ প্রক্রিয়া করতে পারি। এই কথার গুরুত্ব না দিয়ে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সিবিআই তদন্তের উপর সুপ্রিম কোর্টে স্থগিতাদেশ আছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে যোগ্য লোকের চাকরিও যাবে কি না? সেটা কি আমাদের সরকার হতে দিতে পারে? আমাদের উত্তর হচ্ছে না। যোগ্য লোকের চাকরি যেতে পারে না। যোগ্য চাকরিপ্রার্থীরাও দেখছেন কিভাবে এটা করা হল।
এসএসসি মনে করছে তারা আদালতে যাবে। আমরাও আইনি পরামর্শ নিয়ে দেখব।”
এতসংখ্যক কর্মীর চাকরি যাওয়ার ফল ভুগতে হবে তৃণমূলকে। হুঁশিয়ারি দিয়ে বললেন দিলীপ ঘোষ। বর্ধমান দুর্গাপুরে প্রচার শেষে দিলীপ মঙ্গলবার বলেন, “ হাজার হাজার কোটি টাকা যারা কামিয়েছেন দুর্নীতি করে তাঁদের জেলে যেতে হবে। যে অন্যায় করেছেন তার ফল ভুগতে হবে।”