নিউজ ডেস্কঃ রাজ্য জুড়ে সাড়ম্বরে পালিত হল জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রা উৎপব। জেলার সব জায়গাতে ভক্ত সমাগম ছিল চোখে পড়ার মত। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে বাংলার সংস্কৃতি পরম্পরা মেনে জগন্নাথ বন্দনায় সামিল হল বাংলা।
নদীয়া
মায়াপুরের রাজাপুর মন্দিরে মহা সমারোহে পালিত জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার স্নানযাত্রা উৎসবে সকাল থেকেই ভক্তবৃন্দদের ঢল।
মায়াপুরের রাজাপুর মন্দিরে মহা সমারোহে পালিত হল জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার স্নানযাত্রা উৎসব । এই উপলক্ষে মঙ্গলবার ভক্তদের আগমন ছিল চোখে পড়ার মতো । বলা যেতে পারে, নদিয়া জেলার মায়াপুরের সবথেকে বড় উৎসব জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উৎসব । এই স্নানযাত্রা উৎসবে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা দেবীর বিগ্রহকে ডাবের জল, গঙ্গা জল, দুধ ও দই দিয়ে স্নান করানো হয় ভক্তি সহকারে । অসংখ্য ভক্তের সমাগম ছিল আজ মায়াপুর রাজাপুর জগন্নাথ দেবের মন্দিরে ।কথিত আছে, এই স্নানযাত্রার পরেই জগন্নাথদেব জ্বরাক্রান্ত হন। এবং পুনরায় রথযাত্রার দিন তিনি স্বমহিমায় আবির্ভূত হবেন । মায়াপুর ইসকনের জনসংযোগ আধিকারিক রমেশ দাস বলেন “মায়াপুরের শাখা রাজাপুর জগন্নাথ দেবের মন্দির থেকে সুসজ্জিত রথে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা দেবীর আগমন ঘটে পাঁচ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ইসকন চন্দ্রোদয় মন্দিরে” ।
তমলুক
শনিবার স্নান যাত্রা। জ্যৈষ্ঠ পূর্ণিমা তিথিতে জগন্নাথ দেবের এই স্নানযাত্রা পালিত হয়ে থাকে। ঐতিহ্যবাহী এই উৎসবকে ঘিরে সেজে উঠেছে পুরীর জগন্নাথ মন্দির। এ রাজ্যেও বিভিন্ন জায়গার পাশাপাশি পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তমলুকে ইতিহাস বিজড়িত তমলুক মহাপ্রভু মন্দিরে জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রার আয়োজন করা হয়। এই উপলক্ষে সকাল থেকেই মন্দিরে ভক্তরা আসতে শুরু করে। উল্লেখ্য, স্নানযাত্রা উপলক্ষে আজ জগন্নাথ দেব, বলরাম ও সুভদ্রাকে মূল মন্দির থেকে বাইরে নিয়ে আসা হয় পবিত্র স্নানস্থলে। তিন বিগ্রহকেই জল ও দুধ দিয়ে স্নান করানোর পর আবার ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় মূল মন্দিরের গর্ভগৃহে। বিভিন্ন পরম্পরা অনুযায়ী শাস্ত্রে লেখা বিধি মেনে এদিনের এই স্নানযাত্রা পর্ব শুরু হয়েছে। কথিত রয়েছে জগন্নাথ দেবের এই স্নানযাত্রা অত্যন্ত শুভ দিন। এমন দিনে বিভিন্ন শুভ কাজ করা হয়ে থাকে, যার শুভফল সুদূরপ্রসারী হয়। মহাস্নান যাত্রার পরে শ্রীশ্রী জগন্নাথ দেব ও শ্রীশ্রী বলরাম দেবকে গজ গনেশ বেশ ও শ্রীশ্রী সুভদ্রা দেবীকে পদ্মবেশে সাজানো হয়।
মাহেশ
জগন্নাথ দেবের স্নান যাত্রার মধ্যে দিয়ে শুরু হল রথযাত্রা উৎসব, কথিত আছে রইবো মহেশে তোমার সকাশে আমি যে জগৎপতি, মাহেশে তে স্নানে-উড়িষ্যায় ভোজনে রবে চিরদিন খ্যাতি! মাহেশের স্নান যাত্রা জগৎবিখ্যাত,বলা হয় জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রার দিন নীলকন্ঠ পাখি ঠাকুরের দূত হিসাবে উড়ে এসে বসে এবং স্নান পর্ব শুরু করার কিছুক্ষণ পরেই সেই নীলকন্ঠ পাখির আর দেখা মিলবে না, তিনি উড়ে চলে যাবেন নীলাচলের বুকে, এটাই ইঙ্গিত দেয় যে মাহেশে স্নানযাত্রা প্রথম, মাহেশ জগন্নাথ মন্দিরের সম্পাদক এবং প্রধান সেবাইত পুত্র পিয়াল অধিকারী বলেন মহাপ্রভুর স্নানযাত্রা উৎসব শুভারম্ভ, আমাদের এ বর্ষের মূল আকর্ষণ- যেহেতু স্নানবেদী পুনঃ সংস্কার হচ্ছে তার জন্য আমরা প্রভুর স্নানের পর থেকেই স্নান বেদীতেই উনাকে রাখবো এবং সেইখানেই অবকাশ বেশ, সাদ বেশ, গজ বেশে ওইখানেই ধারণ করাবো, ভোগ দেওয়া হবে, স্নানবেদিতেই সারাদিনব্যাপী চলবে পূজাঅর্চনা- ভক্তবৃন্দরা ওইখান থেকেই মহাপ্রভুকে পুজো দেবেন পাশাপাশি সন্ধ্যা ৬:৩০টা নাগাদ স্নানবেদীতেই সন্ধ্যা আরতি হবে ও অন্য ভোগ নিবেদন হবে, এরপর ঠিক রাত ৮টা নাগাদ মহাপ্রভুকে আবার আমরা গর্ভগৃহে রাখবো, প্রভুর স্নানযাত্রার পরের দিন থেকে জ্বর আসে, এই সময়টাকে বলা হয় অনবসর কাল, এই সময় ওনাকে পাচন দেওয়া হবে সেই পাচন খেয়ে উনি সুস্থ হয়ে উঠবেন এবং তারপর ৫ই জুলাই হবে নবযৌবন উৎসব এই সময়ে জগন্নাথ দেবের অভিষেক প্রাণ প্রতিষ্ঠা চক্ষুদান হবে হোম যাগযজ্ঞের মাধ্যমে ও আগামী ৭ই জুলাই মাহেশের ঐতিহাসিক ঐতিহ্যমন্ডিত ৬২৮ তম বর্ষের রথযাত্রার মহাসামরোহে পালিত হবে।”মন্দির কমিটির সভাপতি অসীম পন্ডিত বলেন স্নানযাত্রার পর প্রভুর জ্বর হয় বিভিন্নভাবে প্রাকৃতিক নিয়মে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয় তাই এই সময় মন্দির বন্ধ থাকে কিন্তু মন্দিরের অন্যান্য বিগ্রহের ঘর খোলা থাকে এরপর নবযৌবনের দিন ঠিক রথের দু দিন আগে আবার মন্দিরে গর্ভ গৃহের দরজা খুলে দেয়া হয়, হাজারো দর্শনার্থী ও ভক্তবৃন্দদের উপস্থিতিতে মাহেশ জগন্নাথ মন্দিরে স্নানযাত্রা উৎসব জমজমাট, অতিরিক্ত ভিড় সামলাতে ও দর্শনার্থীদের সুরক্ষায় সদা সতর্ক ছিলেন চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের আধিকারিকরা।
ঝাড়গ্রাম
মহা সমারোহে ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুরের ঐতিহ্যবাহী গুপ্ত বৃন্দাবনে শনিবার পালিত হল জগন্নাথদেবের স্নান যাত্রা উৎসব। প্রায় সাড়ে চারশো বছরের প্রাচীন এই উৎসবে অংশ নিয়েছেন হাজার হাজার ভক্ত। রীতি মেনে শনিবার স্নান পূর্ণিমার সন্ধ্যায় শ্রী পাট গোপীবল্লভপুরের মহন্ত মহারাজ কৃষ্ণ কেশবানন্দ দেবগোষ্মামীর উপস্থিতিতে হলুদ মাখিয়ে মোট ১৫ কুইন্টাল দুধ, দই, সুবর্ণরেখা নদীর ১০৮ ঘড়া জল ও দশ কেজি ঘী ঢেলে জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রা দেবীকে স্নান করানো হয়। আর এই স্নান যাত্রা অনুষ্ঠান দেখতে বাংলার বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি পাশের রাজ্য ঝাড়খণ্ড ,ওড়িষ্যা থেকেও হাজার হাজার মানুষজন ভিড় জমিয়েছেন । প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও গোপীবল্লভপুরে ঐতিহ্যবাহী গুপ্ত বিন্দাবনে পালিত হল শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রা উৎসব