নিউজ ডেস্ক: সোমবার নবান্ন সভাঘরেহকারদের রাস্তা দখল নিয়ে
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষোভ প্রকাশ করতেই মঙ্গলবার সকাল থেকে ময়দানে
নেমে যায় পুলিশ। রাজ্যজুড়ে ব্যাপক হকার উচ্ছেদ (Hawkers
eviction) শুরু হয়। নির্বিচারে ভাঙ্গা হয় হাজার হাজার দোকান। কিন্তু বাছাই করে কিছু জায়গায় দোকান ভাঙা হলেও
খিদিরপুর, নিউ মার্কেটের মত যেখানে হাঁটা দায় তেমন বহু
জায়গায় পুলিশ উচ্ছেদ অভিযান এড়িয়ে যায়। এই ‘সেলেক্টিভ’ উচ্ছেদ অভিযানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ শুরু হয়
রাজ্যজুড়ে। ক্ষোভের জেরে অবশেষে উচ্ছেদ অভিযান স্থগিত করে
দিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শুভেন্দুর হুঁশিয়ারি
রাজ্যজুড়ে নির্বিচারে হকার উচ্ছেদের
প্রতিবাদ জানায় বিজেপি। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “রাজ্যে কর্মসংস্থান
নেই। মানুষ বাধ্য হয়ে হকারি করছে। কোনভাবে সংসার চালাচ্ছে। উনি বললেন ঝালমুড়ি ঘুঘনি
বিক্রি কর। আর উনি হকারদের দোকান তুলে দিচ্ছেন। উনি বেছে বেছে উচ্ছেদ (Hawkers
eviction) করছেন। আমরা দরকার হলে বুলডোজারের সামনে শুয়ে আন্দোলন করব।”
পিছিয়ে এলেন মমতা
বিজেপি পথে নামার হুঁশিয়ারি ও
মানুষের প্রবল চাপে বৃহস্পতিবার নবান্ন সভাঘর
থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,“হকারদের আমি ভালোবাসি। রাস্তায় একটা দুর্ঘটনা হলে
সবাই মুখ ফিরিয়ে চলে গেলেও হকাররা ছুটে আসে। আমি যা করেছি
তা ওদের বিরুদ্ধে নয়। কলকাতাকে সুন্দর করতে হবে। আপনারা সহযোগিতা করুন। সরকার আপনাদের সঙ্গে থাকবে।” অবশ্য দুদিন আগেই মমতা বলেছিলেন,“লাল কালো ত্রিপল টানিয়ে বাইরের লোকেরা বসে পড়ছে।
এভাবে চলতে পারেনা।” এমনকি কাউন্সিলরদের একাংশ টাকার বিনিময়
হকার বসানোর সঙ্গে জড়িত আছে বলে উল্লেখ করেন মমতা।
পুনর্বাসনের আশ্বাস মমতার
এদিন অবশ্য ৩৮০ ডিগ্রি
ঘুরে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলেন,“হকারদের
দোষ দিয়ে কী লাভ। দোষ তো আমাদেরই। আমরা নিউমার্কেট এলাকায় একটা বিল্ডিং
বানিয়ে দিচ্ছি। যেখানে ওরা বসবেন। এটা
আমাদেরই করতে হবে। হকাররা সেখানে থাকবেন।” তবে হকেরদের বসানোর সঙ্গে শাসক দলের নেতাদের এবং
পুলিশের যোগসূত্র রয়েছে এদিন ফের স্মরণ করিয়ে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তোলাবাজি হচ্ছে, ফের বললেন মমতা
প্রসঙ্গত রাজ্যজুড়ে
শাসক দলের নেতারা যে দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত এদিন তা প্রকাশ পেয়েছে মমতা
বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথাতেই। বৃহস্পতিবার রিভিউ মিটিংয়ে
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,“যত বড়
নেতা হোক কাউকে ছেড়ে কথা বলব না। হকারদের থেকে চাঁদা তোলা
বন্ধ করুন নেতারা। বহিরাগতদের জায়গা দেওয়া যাবে না। বেআইনী পার্কিং থেকে টাকা
তোলা হচ্ছে। বেআইনী পার্কিং বন্ধ করতে হবে। রাস্তা বানানোর পর ৫ বছর না চললে ঠিকাদারদের ব্লাকলিস্ট করতে হবে।
বেআইনি বাড়ি বিপজ্জনক বাড়ি ঠিক না করা হলে বাড়ির অধিগ্রহণ করা হবে।” প্রসঙ্গত রাস্তা তৈরি হওয়ার পর এক বর্ষাতেই খারাপ হওয়া নতুন কোন ঘটনা
নয়। রাস্তায় কাটমানির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। মুখ্যমন্ত্রীর
এদিনের বক্তব্যেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা উঠে আসে। কিন্তু যেভাবে উচ্ছেদ
(Hawkers eviction) করতে গিয়ে ৪৮
ঘণ্টাতেই সরকার এই অভিযান স্থগিত করে দিল, তাতে সরকারের দুর্নীতির
বিরুদ্ধে লড়াই কতটা বাস্তবের মাটিতে প্রতিফলিত হবে তা নিয়ে
সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
কেন হকার উচ্ছেদ (Hawkers
eviction)
রাজনৈতিক মহলের মতে শহর এলাকায় তৃণমূলের বুধ ভিত্তিক ফল আশা জনক না হওয়ায় মমতা ড্যামেজ
কন্ট্রোলে নেমেছিলেন। কিন্তু ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে গেলে গিয়ে এই উচ্ছেদ অভিযানে
আরও বেশি ড্যামেজ হয়ে যাবার আশঙ্কা তৈরি হয়। কারণ একদা
মুখ্যমন্ত্রী নিজেই ঘুগনি, ঝালমুড়ি বিক্রি করার নিদান দিয়ে
এখন সেই ঝালমুড়ি ঘুগনিওয়ালাদের দোকান ভেঙে দেওয়ায় গরিব মানুষের ভোট সরে
যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে কয়েক লক্ষ মানুষ হকারি পেশার সঙ্গে যুক্ত। এইভাবে রাজ্যে জুড়ে হকার উচ্ছেদ (Hawkers
eviction) অভিযান হলে শহুরে ভোট আরও হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাতেই আপাতত এক মাস উচ্ছেদ অভিযান থেকে সরে এসেছে
সরকার এমনটাই মনে করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী সার্ভে করে হকারদের পুনর্বাসন
দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।