নিউজ ডেস্ক: পশ্চিম
মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া,
পুরুলিয়া সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক
উত্তীর্ণ ষোলো জন দুঃস্থ ও মেধাবী শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে এককালীন পাঁচ হাজার করে
মোট আশি হাজার টাকার আর্থিক অনুদান দিলেন শিক্ষক হেরম্ব নাথ চক্রবর্তী। বাঁকুড়া জেলার তালডাংরা থানার কদমা উচ্চ বিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিষয়ের
শিক্ষক তিনি।
হেরম্ব বাবু জানান, বাঁকুড়া বিশ্বপ্রেমিক সঙ্ঘ নামক
আশ্রমের অধ্যক্ষ প্রবীন সন্ন্যাসী স্বামী প্রশান্তানন্দ মহারাজের জীবনাদর্শ তার
জীবনকে গভীর ভাবে প্রভাবিত করেছে ।মহারাজ জীর ইচ্ছে ছিল একটি আবাসিক আশ্রমিক
বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার ।বিভিন্ন
অসুবিধার জন্য তিনি আশ্রমে কোনও আবাসিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে পারেন নি ঠিকই,কিন্তু দুঃস্থ ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি চালু
করেছিলেন ‘এডুকেশনাল প্রমোশন স্কিম ‘।
এই স্কিমের উদ্দেশ্য ছিল, অর্থনৈতিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া
মেধাবী শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তক বিতরন করা এবং আর্থিক সাহায্য করা। এই সমস্ত কাজ
তাঁরই উপস্থিতিতে, তাঁরই তত্ত্বাবধানে আশ্রম প্রাঙ্গনেই অনুষ্ঠিত হত। তাই গুরুদেবের
প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়েই তার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস বলে জানান হেরম্ব বাবু।
পশ্চিম মেদিনীপুরের
ধেড়ুয়া হাইস্কুলের বিপাশা বেরা,ঝাড়গ্রামের নয়াগ্রাম
জনকল্যাণ বিদ্যাপীঠের নির্ঝরা দে, ঝাড়গ্রাম জেলার জামবনি
ব্লকের গিধনী এলোকেশী হাইস্কুলের প্রিয়াংকা বাগাল, বাঁকুড়ার
কদমা উচ্চ-বিদ্যালয়য়ে ধ্রুব পণ্ডা, পুরুলিযর বামু
সাধু আশ্রম হাইস্কুলের ঠাকুরদাস মাহাত, বীরভূমের
বোলপুর নিচু পট্টি নীরদ বরনী হাইস্কুলের
পিতৃহীন ছাত্র অভিষেক সান্যাল, ঝাড়গ্রাম জেলার
একলব্য মডেল রেসিডেন্সিয়াল স্কুলের কোয়েল শবর, মুর্শিদাবাদের
কান্দি রাজ হাইস্কুলের বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ছাত্র মহম্মদ আলম রহমান ,ঝাড়গ্রামের বালিগাড়িয়া হাইস্কুলের বিশ্বজিৎ মাহাতো সহ মোট ষোলো জন
শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে এককালীন পাঁচ হাজার টাকা করে এই স্কলারশিপ বাবদ প্রত্যেকের
ব্যাংক একাউন্টে পাঠিয়ে দিয়েছেন হেরম্ববাবু। কখনো সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরের
ভিত্তিতে, কখনো কোনো সমাজসেবী সংস্থার মাধ্যমে,কখনো সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে, কখনও কোনও হৃদয়বান ব্যক্তির মাধ্যমে এই শিক্ষার্থীদের
বিষয়ে জানতে পারেন তিনি এবং সেইসব শিক্ষার্থীদের সাথে নিজেই যোগাযোগ করেন এবং
তাদের পাশে সাধ্যমতো দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন হেরম্ববাবু।
উল্লেখ্য,বাঁকুড়া জেলার তালডাংরা থানার হাড়মাসড়া গ্রামের বাসিন্দা হেরম্ব বাবু
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংস্কৃত বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে
বাঁকুড়া জেলার পাঁচমুড়া মহাবিদ্যালয়ে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে ২০০৪ সালে তাঁর
কর্মজীবন শুরু করেন।পরবর্তী ক্ষেত্রে স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ
হয়ে তৎকালীন পশ্চিম মেদিনীপুর (অধুনা ঝাড়গ্রাম) জেলার গোপীবল্লভপুর এক নম্বর
ব্লকের অন্তর্গত ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন নয়াবসান জনকল্যাণ বিদ্যাপীঠে ২০০৬ সালে
শিক্ষকতা কার্যে যোগদান করেন। দীর্ঘ পনেরো বছর ছয় মাসেরও কিছু বেশি সময় তিনি এই
বিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন । এই বিদ্যালয়ে কর্মরত থাকাকালীনই তিনি মুখোমুখি
হয়েছিলেন কোভিড মহামারীর সাথে ।এই মহামারীর ফলে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বহু
কল কারখানা। কর্মহীন হয়েছিলেন বহু শ্রমিক। রুটি রোজগারহীন হয়েছিলেন বহু মানুষ।
নিজের জীবন বিপন্ন করে সেই সমস্ত কর্মহীন শ্রমিকদের কাছে, রুটি রোজগারহীন মানুষদের কাছে তিনি পৌঁছে দিয়েছিলেন প্রয়োজনীয়
খাদ্যদ্রব্য ।দীর্ঘদিন বিদ্যালয়ের পঠন-পাঠন বন্ধ থাকায় বাড়ছিল স্কুল ছুটের
সংখ্যা ।তারা নিযুক্ত হচ্ছিল শিশু শ্রমিকে।তাদেরকে বিদ্যালয় জীবনের স্বাভাবিক
ছন্দে ফিরিয়ে আনতে তিনি নিজের জীবনের
ঝুঁকি নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন সেই সব শিক্ষার্থীদের বাড়িতে, বাড়িতে। চেষ্টা করেছিলেন কোভিড মহামারীর আতঙ্ক কাটিয়ে কোমলমতি
শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে আনতে বিদ্যালয় জীবনে স্বাভাবিক ছন্দে।তাই ‘জঙ্গলমহল ‘ এলাকায় মানুষের কাছে শিক্ষক হিসেবে হেরম্ববাবু একটি পরিচিত নাম।
পরবর্তী সময়ে উৎসশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে তিনি বদলি হয়ে যান তার বাড়ির নিকটবর্তী
কদমা উচ্চ বিদ্যালয়ে।তাঁর জন্মভূমি এবং কর্মভূমি বাঁকুড়াতে হলেও জনহিতকর সামাজিক
কর্মকান্ডের পরিধি জেলার গণ্ডি অতিক্রম করে ছড়িয়ে পড়েছে রাজ্যের বিভিন্ন
প্রান্তে।এভাবেই
এই মানবদরদী শিক্ষক তাঁর জীবন সৌরভে সুরভিত করে চলেছেন অসংখ্য মানুষকে