মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশের (Bangladesh) প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অন্যতম খুনি আব্দুল মাজেদ ২০২০ সালে ঢাকা সংলগ্ন
মিরপুর থেকে গ্রেফতার হওয়ার আগে ২২ বছর কলকাতায় লুকিয়ে ছিলেন। মাজেদের কাছে জাল ভারতীয় নথি পাওয়া
যায়। পশ্চিমবঙ্গের রাজধানীতে লুকিয়ে থাকাকালীন টের পায়নি বাম
কিংবা পরবর্তী মমতা প্রশাসন। মাজেদ তাঁর
গ্রেফতারের সময় স্বীকার করে, যে সে পশ্চিমবঙ্গে (West
Bengal) লুকিয়ে ছিল, তবে সে আত্মগোপনে থাকাকালীনতাঁর কার্যকলাপ সম্পর্কে বিস্তারিত জানায় নি
সে।
কী হয়েছিল ১৫ অগাস্ট ১৯৭৫ (Bangladesh)
আব্দুল মাজেদ
বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার সময় বাংলাদেশ (Bangladesh) সেনাবাহিনীতে
ক্যাপ্টেন পদমর্যাদার আধিকারিক ছিলেন। ১৪ অগাস্ট ১৯৭৫ মেজর সৈয়দ ফারুক রহমান,
খন্দকার আবদুর রশিদ, শরিফুল
হক ডালিম, মহিউদ্দিন আহমেদ, রাশেদ
চৌধুরী, নুর চৌধুরী,আব্দুল মাজেদসহ
বেশ কিছু সেনার আধিকারিক বেঙ্গল ল্যান্ড ল্যান্সার অস্ত্র বহর থেকে
অস্ত্র লুট করে সেনা অভ্যুত্থান ঘটান। সেই সময় বাংলাদেশ
সেনাবাহিনীর দুটি ব্যাটালিয়ন এই অভ্যুত্থানে যুক্ত ছিল বলে অভিযোগ।১৫অগাস্ট ১৯৭৫ বঙ্গবন্ধুর
পরিবারের সদস্য সহ মোট ৩৬ জন নিহত হন।
বঙ্গবন্ধু ও তাঁদের পরিবারের সকলকে হত্যা করার পর তাঁরা বঙ্গভবনে সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নতুন সরকারের
গঠন করেছে বলে ঘোষণা করে এবং সেই সরকারের প্রধান খন্দকার মুস্তাক আহমেদকে ঘোষণা
করা হয়। এরপর জেলবন্দী আওয়ামী লীগের চার নেতা আবুল হাসনাত,
মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, মোহাম্মদ মনসুর আলী, সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং তাজউদ্দীন আহমেদকেও তাঁরা
হত্যা করে।
বঙ্গবন্ধু সহ বাকিদের হত্যা মামলার
বিচার প্রক্রিয়া
১৯৯৮ সালে শেখ মুজিবুর
রহমান হত্যা মামলায় ঢাকার দায়রা জজ আদালত ১৫ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেয়। ২০০১ সালে, হাইকোর্ট তিনজনকে
বেকসুর খালাস করে। ২০০৯ সালে পলাতক অবস্থাতেই মাজেদের মৃত্যুদন্ড ফের কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া
হয়। ২০১০ সালে, মুজিবর রহমানের
হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়ার কথা স্বীকার করা পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। যদিও
সেই সময় পলাতক থাকার কারণে আব্দুল মাজেদ শাস্তি কার্যকর
করা যায়নি। তিনি সেই সময় আত্মগোপন করে
কলকাতায় ছিলেন। ২০২০ সালে তিনি লুকিয়ে বাংলাদেশে (Bangladesh) আসেন। এরপরেই খবর পেয়ে বাংলাদেশের ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রানজ্যাকশনাল ক্রাইম বিভাগ তাঁকে ৭ এপ্রিল ২০২০ মিরপুর সংলগ্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার
করে। গ্রেফতারের পর তাঁকে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে পাঠানো হয়।
মুজিব হত্যাকারী আব্দুল মাজেদ ২৩ বছর কলকাতায় আত্মগোপন করেছিলেন, ১২ এপ্রিল ২০২০ আব্দুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আশ্রয়দাতা
কারা?
আব্দুল মাজেদ
ছাড়াও আরও আরও অনেক ঘাতক বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যায়। নুর চৌধুরী নামে একজন কানাডায় এবং রাশেদ চৌধুরী নামে একজন যুক্তরাষ্ট্রে
গেছেন। দুজনেই বাংলাদেশে মোস্ট ওয়ান্টেড ছিলেন এবং তাঁদের
বিচার এখনও হয়নি। এদের মধ্যে নুর চৌধুরী চৌধুরী সেই ব্যক্তি যিনি বঙ্গবন্ধুকে
গুলি করেছিলেন। পদ্মশ্রী লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলি জহিরের মতে, বাংলাদেশ (Bangladesh) সেনাবাহিনীতে দায়িত্ব পালন করা একজন অফিসার, শেখ
হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালীন, কূটনৈতিক চ্যানেল এবং সর্বোচ্চ
স্তরে বৈঠকের মাধ্যমে হত্যাকারীদের ফেরানোর আবেদন করেছিলেন।
কানাডা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাঁদের প্রত্যর্পণের আর্জি
প্রত্যাখান করে দেয়। উভয় দেশের সরকারগুলি এই দুজনকে রক্ষা করে
চলেছে। কানাডা এবং আমেরিকা দুষ্কৃতীদের আশ্রয়দাতা হয়ে উঠেছে। ভারতের শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী
সহ সন্ত্রাসবাদী, খুনি এবং এই জাতীয় অন্যান্য অপরাধীদের জন্য আশ্রয়স্থল কানাডা।অন্যদিকে
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যও বাংলাদেশের অপরাধীদের আস্তানায় পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশে বহু মোস্ট ওয়ান্টেড অপরাধীদের অনেকেই পশ্চিমবঙ্গ (West
Bengal) রাজ্যে এসে আশ্রয় নেয়। অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা গ্রেফতার
হয়। অনেকেই পালিয়ে যায়। চলতি বছর আনোয়ারুল আজিম আনার নিউটাউনে খুন হন। তাঁকে খুন করে
দুষ্কৃতীরা বাংলাদেশ এবং আমেরিকায় পালিয়ে যায়। অথচ ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি রাজ্যের পুলিশ।
পরে বাংলাদেশ পুলিশ বিষয়টি জানালে ময়দানে নামে সি আই ডি। এর আগে বাম আমলে ২০০৭ সালে, প্রায় ৮ জন বাংলাদেশী মোস্ট
ওয়ান্টেড দুষ্কৃতীকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে সিআইডি গ্রেফতার করেছিল। এর মধ্যে খুনি, ধর্ষক, চোরাকারবারি এমনকি স্থানীয় অপরাধীরাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। এর মধ্যে একজন
হ্যারিস আহমেদ যিনি বাংলাদেশে ৪০টি হত্যা মামলা ও কয়েক ডজন তোলাবাজি মামলায় ওয়ান্টেড ছিলেন। জাল পরিচয়পত্র ব্যবহার করে সে পশ্চিমবঙ্গে
লুকিয়ে ছিল এবং সেই সময় একটি পোশাকের দোকান চালাত। তাছাড়া তিনি বাংলা থেকে ফোনে
তার চাঁদাবাজি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। পর ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ
সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন
সরকার সহ সাতজনকে অপহরণ করে খুন মামলায় মূল অভিযুক্ত সহ নূর হোসেন সহ তিন জন
অস্ত্র সহ কলকাতা বিমানবন্দর সংলগ্ন কৈখালি এলাকা থেকে গ্রেফতার হয়। পরে তাঁকে বাংলাদেশের
অনুরোধে ফেরত পাঠানো হয়। এহেন অনেক উদাহরণ রয়েছে বাংলাদেশী অপরাধীদের পশ্চিমবঙ্গে ঠাঁই
নেওয়ার।