নিউজ ডেস্ক: উত্তরবঙ্গের জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের হলং সেন্ট্রাল পিলখানা। বনদফতরের খাতায় যা ‘এলিফ্যান্ট স্কুল’ বা হাতির পাঠশালা (Elephant school)। সেই কবে তোর্সার জলে ভেসে এসেছিল একরত্তি হাতির ছানা। পাঠশালায় গুরুমশাইয়ের কাছে সহবত শিখে সেই বীর এখন কুনকি হওয়ার পথে।
এ প্রসঙ্গে জলদাপাড়া বনবিভাগের ডিএফও প্রবীণ কাসোয়ান বলেন, “ওকে বাঁচানোটাই এক সময় আমাদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। এখন ওর মধ্যে আমরা আদর্শ কুনকি হাতি হয়ে ওঠার সব লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি।” জানা গিয়েছে জলদাপাড়ায় এখন ৫টি হস্তিশাবক রয়েছে। কলাবতী, রেয়ানদের সঙ্গে আদরে প্রশ্রয়ে বীরও বেড়ে উঠছে সেখানে।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাস। জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের কোদালবস্তি রেঞ্জের বনকর্মীরা একদিন দেখেন উত্তাল তোর্সায় একটা পুচকে হাতি অসহায়ের খড়কুটোর মতো ভেসে আসছে। তখন ভরা কোভিড। আবার বর্ষাও। খরস্রোতা তোর্সার মুখে ঝাঁপ দিয়ে হস্তিশাবককে উদ্ধার করে আনেন বনকর্মীরা। যখন তাকে উদ্ধার করা হয়, একেবারে ভয়ে সিঁটিয়ে ছিল। এতক্ষণ জলে থেকে কেমন একটা হয়েও গিয়েছিল। দিনরাত এক করে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের বন্যপ্রাণ চিকিৎসক উৎপল শর্মার নেতৃত্বে একটি টিম ওই শাবকের জীবন বাঁচান। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় হলংয়ের স্কুলে (Elephant school)। তখনও বীর অনেকটাই দুর্বল। গুঁড়ো দুধের তরল মিশ্রণও গিলতে পারত না। মুখের ভিতর ফানেল ঢুকিয়ে খাওয়ানো হতো। বনকর্মী ছেরণ সুব্বা তো কোলের সন্তানের মতোই দেখভাল করত বীরের। ছেরণকে রাতেও থাকতে হতো বীরের সঙ্গে। তাঁকে না দেখলেই কেমন যেন একটা করত।
আসতে আসতে স্বাভাবিক হয় পরিস্থিতি। বীরও ধাতস্থ হয়। এরপর সহবত শেখানো শুরু। সঙ্গে হাঁটা, ছোটা সব শেখে। এরপর হনহনিয়ে ছুটে বেড়াত। এখন বীর কিছুটা বড় হয়েছে। আদর্শ কুনকি হয়ে ওঠার জন্য অনেক কিছুই শিখেছে সে।
বনকর্মী আর মাহুতরা তার নাম দিয়েছিল বীর। মাহুত রোহিত ইসলাম একবার যদি বীর বলে হাঁক দেয়, শুঁড় তুলে ছুট শুরু।
আসলে এই শাবকটিকে ভালোবেসে বড় করার পেছনে যার অবদান সবচেয়ে বেশি, তিনি হলেন বনকর্মী ছেরণ সুব্বা৷ তিনি শাবকটিকে উদ্ধার করার দিন থেকে প্রথম চারমাস শাবকটির যত্ন নিতে পিলখানাতেই ঘুমোতেন। তবে বর্তমানে সেটির দেখাশোনা করছেন রোহিত ইসলাম৷