নিউজ ডেস্ক: এবার পুজোয় মুক্তি পেতে চলেছে নন্দিতা রায় ও শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘বহুরূপী’ (Bohurupi)। তবে এই ছবি আদতে বহুরূপী সম্প্রদায় বা লোকায়ত এই সংস্কৃতি সংক্রান্ত কোনও ডকুফিচার গোত্রের সিনেমা নয়। হ্যাঁ, একশোবার এই ছবির মূল ভিত্তি একটি সত্য ঘটনা, কিন্তু এর আখ্যানভাগ আদতে চিরায়ত ‘চোর-পুলিশ’ খেলার মন্ত্রণার উপর দাঁড়িয়ে।
তবে ছবি মুক্তির সময় কলকাতায় থাকতে পারছেন না পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, তাই মনে করেছিলেন ছবিটা বোধহয় তাঁর দেখাই হবে না। কিন্তু সেই আফশোস রাখতে দেননি নন্দিতা রায় আর শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। তাঁরাই ব্যবস্থা করেছিলেন ছবি দেখার। আর তাঁদের তৈরি দ্বিতীয় থ্রিলার দেখে মুগ্ধ, অভিভূত কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় (Kaushaik Ganguly)।
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘বহুরূপী’-র (Bohurupi) ছবি পোস্ট করে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছেন, কাবেরী অন্তর্ধানের জন্য জাতীয় পুরস্কার নিতে দিল্লী যাব বলে ৮ তারিখ কোনো প্রিমিয়ারেই নতুন ছবি দেখা হবেনা ভেবেছিলাম। উইন্ডোজ আমার সেই খিদেটা মিটিয়ে দিল গতরাতে। আমার জন্য আলাদা স্ক্রিনিং করে দেখিয়ে দিলো বহুরূপী। গতরাত থেকে কতটা প্রশংসা করবো, আর কতটুকু বলবো তার পরিমাপ করছিলাম, যাতে দর্শকের এই ছবিটা দেখার মজা না নষ্ট হয়। যাকে বলে স্পয়লার না দিয়ে ফেলি। নন্দিতাদির ও শিবুর এই ছবি দেখে এটুকু বুঝে গেছি এটা রক্তবীজের বাপ। বাংলা সিনেমা বাংলার মাটিকে নিয়ে মৌলিক গল্প বাঁধবে এটাই সবচেয়ে গর্বের পথ। এই পথে বারবার নানা স্বাদের ছবিতে উইন্ডোজ দর্শককে মুগ্ধ করেছে। কেবল গল্প বলা নয়, সামাজিক মূল্যবোধ বা প্রতিবাদ ওদের ছবির বিনোদনের মোড়কে বারবার ফুটে উঠেছে! এবার তার ১০ গুন বেশী! খুব কড়া রাজনৈতিক বক্তব্য আছড়ে পড়েছে পর্দায়, বারবার! হাজার মিছিলের সারমর্ম মানবিক কয়েকটা জীবন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে বানের জলের মতো ভাসিয়ে নিয়ে গেছে সাধারণ মানুষের বুকে জমে থাকা নাবলা অনেক কষ্ট! এবারের পুজোর মেজাজ একটু আলাদা । সময়োপযোগী এরম একটা তীব্র ছবি অনেকদিন দেখিনি। এই পুজোয় আমার গর্ব যে বাংলার সিনেমা নির্মাতা এরম একটা বিষয় উৎসবের বাজারে বাছার দম দেখালেন। আনন্দ হচ্ছে দর্শক এরম ছবি দেখার সুযোগ পাবেন কাল থেকে। যেমন চিত্রনাট্য,অভিনয়, তেমনি পরিচালনা ও সম্পাদনা। তবে মনে খোদাই হয়ে গেল এই ছবির গান ও আবহসংগীত। বনি চক্রবর্তীর টিমকে ‘সেঞ্চুরিটা হামি’ দিলাম। যারা ইমোশনাল দর্শক রুমাল মাস্ট, যারা টেনশনে ঘাবড়ে যান তারা একা যাবেন না। যারা জীবনে সিস্টেমের কাছে ঠকেছেন, তারা দল বেঁধে গিয়ে এই ছবি দেখুন।টিকিট কেটে ফেলুন, তবে সপরিবারে। ভালোবাসার ডাকাত অজান্তে মন চুরি করে নেবে, কথা দিচ্ছি।’
‘বহুরূপী’ (Bohurupi) আসলে একটি নির্ভেজাল ‘থ্রিলার’ ছবি। মূলত পুলিশ এবং অপরাধীর পরস্পরের বিরুদ্ধে শানিত বুদ্ধির দাবা খেলা। কিন্তু সেই কাহিনির মধ্যেই চিত্রনাট্যের মাধ্যমে বুনে দেওয়া হয়েছে মানবিক কিছু সম্পর্ক, পারিবারিক টানাপড়েন, অথৈ প্রেম, সাহসিকতা, রোমাঞ্চ, রক্ত গরম করা সংলাপ, এবং ভীষণ রকমের বাঙালি ‘সেন্টিমেন্ট’। অথচ সারা ছবিতে এক টুকরোও অপভাষার প্রয়োগ নেই কোথাও। এই রকম ঘটনা নিয়েও যে বাংলায় এমন পরিশীলিত ভাষ্যে চিত্রনাট্য লেখা যায়, এটি একটি অনুধাবনীয় বিষয়। অর্থাৎ, এই বছর পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের সঙ্গে নির্দ্বিধায় বসে দেখার মতো একটি বাংলা ছবি ‘বহুরূপী’। তাই দেরি না করে কেটে ফেলুন অগ্রিম টিকিট। আর সপরিবারে দেখুন বহুরূপী।