নিউজ ডেস্ক: পুরুলিয়া শহরের রাঁচি রোড বাইলেনের বাসিন্দা শংকর মুখোপাধ্যায়। পেশায় শিক্ষক। কিন্তু মনেপ্রাণে একজন শিল্পী। আর সেই শিল্পকর্ম তিনি ফুটিয়ে তোলেন গৃহলক্ষ্মীর (Devi Lakshmi) আরাধনায়। আজ নয় ১৮ বছর ধরে নিজ হাতে লক্ষ্মী প্রতিমা গড়ে পুজো করে আসছেন তিনি। এবার দেড় ফুটের লক্ষ্মী প্রতিমা। সেইসঙ্গে দেবীর আলয় গড়ার কাজে তাঁর নিজস্ব থিম, একটা ভাবনা। সেই সঙ্গে সমাজেও বার্তা দেন তিনি। দেবীর আলয় গড়তে পাট ব্যবহার করার পাশাপাশি সামান্য থার্মোকল ব্যবহার করেছেন। এই কাজের মধ্য দিয়ে তাঁর বার্তা বর্জন করা থার্মোকলকে শিল্পকর্মে ব্যবহার করে পরিবেশকে দূষণমুক্ত করা।
তাঁর দেড় ফুটের লক্ষ্মী প্রতিমা একেবারে সোনায় মোড়া। সোনার অলঙ্কারে ধনলক্ষ্মীকে সাজিয়ে তুলেছেন তিনি। সোনার হার, কানের দুল, চিক, কোমরবন্ধনী, বাজুবন্ধ, হাতের চুড়ি, আংটি, সিঁথি, মুকুট, নথ, চুটকি এসব আছেই। এবার নতুন যুক্ত হয়েছে পায়ে নুপূর। আলয়ের মাঝখানে তিনি একটি অগ্নিকুণ্ড করেছেন।
এ প্রসঙ্গে ওই শিক্ষক জানিয়েছেন, ” সামাজিক অবক্ষয় ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে যে অনাচার, বেনিয়ম হচ্ছে তা যেন আহুতি স্বরূপ ওই অগ্নিকাণ্ডে বিনাশ ঘটে।” ওই আলয়ের দুপাশে রয়েছে সরোবর। সেখানে থাকবে প্রস্ফুটিত কমল। তাঁর বার্তা, অনৈতিক কাজকর্ম বিনাশ হয়ে কমলের মত প্রস্ফুটিত হয়ে উদ্ভাসিত হোক এটাই মায়ের কাছে প্রার্থনা। দেবীর আলয় গড়তে প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের শিল্পকলাকে ব্যবহার করেছেন তিনি।ভারতীয় সনাতন ধর্মের মন্দিরের আদল সেইসঙ্গে হাজারদুয়ারির যে স্তম্ভ আছে তার মিশেলে মা লক্ষ্মীর (Devi Lakshmi) আলয় তৈরি হয়েছে।
পুরুলিয়ার বেলকুড়ি রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ মিশনের সংস্কৃতের শিক্ষক তিনি। এবার পাট শিল্পকে কাজে লাগিয়েই লক্ষ্মী প্রতিমার আলয় তৈরি করেছেন। তাঁর দক্ষ হাতের নিখুঁত কাজ খুব সহজেই চোখ টানছে সকলের। বেশ কয়েক বছর ধরেই তিনি ১১ রকমের মাটি দিয়ে লক্ষ্মী প্রতিমা (Devi Lakshmi) গড়েছেন। বছর দুয়েক আগে তাতে মিশিয়েছেন বদ্রিনাথের মাটি। সঙ্গে মন্দাকিনী উষ্ণ প্রস্রবনের জল। ফি বছর মহালয়ার আগে তিনি এই লক্ষ্মী প্রতিমার ভাসান দেন টবে। পরের বছরের জন্য টবে থাকা সেই মাটিতেই গড়েন মায়ের প্রতিমা। মায়ের শাড়িও ওই শিক্ষকের হাতেই তৈরি। এবার মায়ের পরনে রয়েছে সিনথেটিক জরি দিয়ে ব্রোকেট শাড়ি। জরি দিয়ে বুনে বুনে এই নিখুঁত কাজ দেখলে চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে।
দুমাস আগে থেকে তিনি এই কাজ শুরু করেন। মাঝখানে শরীর খারাপ হওয়ায় সময় দিতে পারেননি। তাঁর শিল্পকর্ম কয়েক বছর ধরেই শহর পুরুলিয়ায় ব্যাপক নজর কেড়েছে। একেবারে ছেলেবেলা থেকেই তিনি এই শিল্পকর্মের সঙ্গে যুক্ত। হাতে-কলমে কখনও মূর্তি তৈরির কাজ না শিখলেও মাতৃপ্রতিমার টানে কুমোর পাড়ায় বসে থাকতে তাঁর ভালো লাগতো। সেখান থেকেই তিনি এই কাজ রপ্ত করেন। তাঁর একটাই কথা, “ইচ্ছে থাকলে সব হয়।”