নিউজ ডেস্ক: তিনি ডাক্তার নন, ডাক্তারির কিছু জানেনও না। তবে হাতেকলমে নিখুঁত মাপতে জানেন রক্তচাপ। যন্ত্রের মাধ্যমে বলে দিতে পারেন রক্তে শর্করার মাত্রাও। আর সেই বিদ্যে নিয়েই গত তিন দশক ধরে অফিসপাড়ায় (Kolkata) প্রেশার, সুগার মেপে দিচ্ছেন হাওড়ার তপন দাস। ধর্মতলা থেকে গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউয়ের দিকে যাওয়া বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটে গ্রেট ইস্টার্ন হোটেলের পাশ দিয়ে আসা আব্দুল হামিদ স্ট্রিট যেখানে মিশছে, সেখানেই তপনের ‘চেম্বার’।
তপনের চেম্বারকে (Kolkata) ‘টেবিল’ বলাই ভাল। গায়ে ‘ব্লাড সুগার চেক, ব্লাড প্রেশার চেক’ লেখা বোর্ড। টেবিলের উপর পরীক্ষার যন্ত্রপাতি। পাশে একটি টুল আর দু’টি চেয়ার। টুলটি তপনের। যাঁরা পরীক্ষা করান তাঁদের জন্য চেয়ার। এখন ২০ টাকায় প্রেশার আর ৫০ টাকায় সুগার মাপেন তপন। শুরুর সময়ে দর ছিল ২ টাকা আর ৫ টাকা। সেটা করেই সংসার চালিয়েছেন।
বাবা গোপাল দাস ছিলেন বেসরকারি সংস্থার কর্মী। চাকরিসূত্রে মেদিনীপুর থেকে এসে হাওড়া ময়দানের কাছে ভাড়া থাকতেন। তবে অভাবের কারণে একমাত্র পুত্র তপনকে সে ভাবে লেখাপড়া করাতে পারেননি। চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়া তপন ১৮-১৯ বছর বয়সে এক চিকিৎসকের সহকারীর কাজ পান। খুব বেশি দিন কাজ করেননি। তবে মাস ছয়েকের মধ্যে রোগীদের প্রেশার মাপা, ব্লাড সুগার পরীক্ষা করা শিখে নিয়েছিলেন। মনে হয়েছিল, কলকাতার পথে যদি মানুষের প্রেশার-সুগার মাপা যায়? কেমন হয়? ঘুরতে ঘুরতে অফিসপাড়ার (Kolkata) বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটে চলে আসেন। কথা হয় স্থানীয় হকার ইউনিয়নের সঙ্গে। সেটা ১৯৯২ সাল। তখন থেকেই শুরু হয়ে যায় তাঁর ফুটপাথের চেম্বার। বাম আমল থেকে তৃণমূল জমানা— ‘কেয়ার অফ ফুটপাথ’ ঠিকানা নিয়েই চলছে তপনের ব্যবসা।
এ প্রসঙ্গে তপন বলেন, ‘‘৩২ বছর ধরে এ ভাবেই চলছে আমার কাজ। সকালে ঠিক ১০টায় খুলি আর সন্ধ্যা ৬টা বাজলে ছুটি। এখানে অনেক সরকারি, বেসরকারি (Kolkata) দফতর রয়েছে। সেখানকার কর্মীরাই আমার গ্রাহক। শুধু অসুস্থ হলে আসেন তা নয়, নিজেদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা করিয়ে নিশ্চিন্ত থাকার জন্যও অনেকে নিয়মিত আসেন।’’ ফুটপাথের বাকি হকার বন্ধুদের মতো পুরসভার দেওয়া রঙিন ছাতা নিয়ে স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার পসরা সাজালেও তপনের ছুটি একেবারে সরকারি বাবুদের মতো। সাপ্তাহিক ছুটি রবিবার। পুজো থেকে অন্যান্য পরব, সরকারি ছুটি মানে তাঁরও ছুটি।