নিউজ ডেস্ক: ভারত সরকার উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে আন্তঃসীমান্ত মাদক চোরাচালানের বিষয়ে উদ্বিগ্ন। এই সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার অরুণাচল প্রদেশের পাসিঘাটে অবস্থিত রাষ্ট্রীয় রক্ষা বিশ্ববিদ্যালয় (আরআরইউ)-কে মাদক চোরাচালান নিয়ে তথ্যানুসন্ধানের দায়িত্ব দিয়েছে। পাশাপাশি এই গুরুতর বিষয়ে সমাধান খোঁজার দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে তাদের। এই অনুসন্ধান ভবিষ্যতে মাদক চোরাচালান প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করা হচ্ছে। এর ফলে একদিকে যেমন সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের মাদক চোরাচালানের বিষয়টি বোঝা যাবে, তেমনই স্থানীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রেও বড় ভূমিকা পালন করবে।
আরআরইউ পাসিঘাটের কর্মকর্তা অবিনাশ খরেল বলেন যে, আরআরইউ-এর সেন্টার ফর নারকোটিক্স অ্যান্ড ড্রাগস স্টাডিজ (সিএনডিএস)-এর উদ্দেশ্য, মাদক বিষয়ক গুরুতর সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করা। গবেষণা, শিক্ষা ও সচেতনতামূলক প্রচারের মাধ্যমে আঞ্চলিক স্তরে ও জাতীয় পর্যায়ে মাদকের প্রভাব খতিয়ে দেখা হবে। এই সমীক্ষাটি উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলির ভৌগোলিক অবস্থান এবং মাদক সম্পর্কিত সমস্যার কথা মাথায় রেখে আন্তঃসীমা মাদক পাচার, আঞ্চলিক মাদক সমস্যা বোঝা এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এলাকার পুলিশ আধিকারিকদেরও আধুনিক প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, যাতে তাঁরা আরও ভালোভাবে মাদক সম্পর্কিত সমস্যার মোকাবিলা করতে পারেন। তিনি বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয় দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, সাইবার নিরাপত্তা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়েও কাজ করছে। সাইবার অপরাধ থেকে উদ্ভূত সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য অনেক রাজ্যের পুলিশ আধিকারিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, উত্তর-পূর্ব ভারত তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের জন্য সুপরিচিত। কিন্তু তার মাঝেই মাদক গ্রাস করে নিচ্ছে এখানকার যুবকদের ভবিষ্যৎ। এখন মাদক ও ডোপিং এখানে একটি গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে মায়ানমার সীমান্ত দিয়ে বিপুল পরিমাণ মাদক ভারতে প্রবেশ করে। ফলে মাদকাসক্তির কারণে শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা ক্রমশ ক্ষীন হয়ে আসছে। উত্তর-পূর্ব ভারতে মাদকাসক্তি ক্রমবর্ধমান হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সিএনডিএস-এর এই পরিকল্পনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এরা শুধুমাত্র মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার প্রতিরোধেই কাজ করবে না, বরং সমাজে সচেতনতা বাড়ানো, স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধিতেও সক্রিয় থাকবে। এই উদ্যোগ আঞ্চলিক স্তরে ও জাতীয় পর্যায়ে সুস্থ সমাজ গঠনে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
পুলিশ প্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সঞ্জীব বলেন, সিএনডিএস-এর মূল উদ্দেশ্যগুলির মধ্যে রয়েছে মাদকের অপব্যবহার মোকাবিলায় কার্যকরী কৌশল নির্মাণ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি প্রতিষ্ঠান ও শিল্প সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ানো। বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে কেন্দ্রের লক্ষ্য হল ক্রমবর্ধমান মাদক সমস্যা মোকাবিলায় ছাত্র, গবেষক এবং বিশেষজ্ঞদের প্রয়োজনীয় দক্ষতা বাড়ানো।
আরআরইউ-এর পুলিশ প্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শচীন চৌহানের মতে, এই প্রচেষ্টা জাতীয় নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে একটি বড় পদক্ষেপ। গবেষণা, শিক্ষা এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে সংযোগ, সহযোগিতাকে একত্রিত করে পাসিঘাট ক্যাম্পাসের লক্ষ্য মাদক সংক্রান্ত সমস্যা মোকাবিলায় একটি শক্তিশালী পরিকাঠামো নির্মাণ।