নিউজ ডেস্ক: ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতি রক্ষায় এবং পুনরুজ্জীবিত করার ক্ষেত্রে সংস্কার ভারতী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সংস্কার ভারতীর কাজের প্রশংসা করে এই মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)-র অখিল ভারতীয় প্রচার প্রমুখ সুনীল আম্বেকর। একইসঙ্গে তিনি বলেছেন, নর্তেশ্বর শিবকে কেন্দ্রায়িত এই ধরনের আয়োজন ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিশালতার অনন্য উদাহরণ। তিনি বলেন, শিল্পীরা যেভাবে নর্তেশ্বরের মূর্তি এঁকেছেন তা দেখার মতো।
রবিবার কলকাতায় ভারতীয় জাদুঘরের আশুতোষ জন্মশতবর্ষ মিলনায়তনে ভারতীয় সংস্কৃতি ও বাংলার সমৃদ্ধ ঐতিহ্যকে পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে আয়োজিত নর্তেশ্বর নৃত্য উৎসব এবং নর্তেশ্বর চিত্র প্রদর্শনীর দুর্দান্ত উপস্থাপনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সুনীল আম্বেকর। ‘পশ্চিমবঙ্গ সংস্কৃতি কেন্দ্র’-র সহযোগিতায় ‘সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গ (দক্ষিণ বঙ্গ প্রান্ত)’ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল।
এই অনুষ্ঠানে মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইনস্টিটিউট অফ এশিয়ান স্টাডিজের পরিচালক ডঃ স্বরূপ প্রসাদ ঘোষ বলেছেন, ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এবং এর গভীর রহস্য বিশ্ব মঞ্চে তুলে ধরতে সংস্কার ভারতী বৃহৎ পরিসরে কাজ করছে। এই ধরনের আয়োজন এমনিতেই অনন্য। তিনি নর্তেশ্বর শিবের অপূর্ব মূর্তি চিত্রিত করার জন্য শিল্পীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, এই ধরনের অনুষ্ঠান নতুন প্রজন্মকে তাদের সংস্কৃতি বোঝার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিল নর্তেশ্বর শিবের উপস্থাপনা এবং তার গুরুত্ব। শিবের এই মূর্তিটি, যা বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে একটি অনন্য স্থান ধারণ করে, সঙ্গীত, নৃত্য এবং বাদ্যযন্ত্রের ত্রিবিধ সংমিশ্রণের প্রতীক। বাংলায়, শিবকে ‘নর্তেশ্বর’ হিসাবে পূজিত করা হয়, যিনি আনন্দময় নৃত্যের মাধ্যমে সৃষ্টি ও ধ্বংসের শক্তিকে প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে ‘বঙ্গ সংস্কৃতির আদিপুরুষ: নর্তেশ্বর’ শীর্ষক গ্রন্থ প্রকাশ করা হয়। ‘সংস্কার ভারতী’-র শিল্প ও ঐতিহ্য বিভাগ নিবিড় গবেষণা ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে এই বইটি তৈরি করেছে। এই গ্রন্থে নর্তেশ্বর শিবের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বের বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। ‘পূর্বাঞ্চল কালচার সেন্টার’, ‘ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম’, ‘মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইনস্টিটিউট অফ এশিয়ান স্টাডিজ’ এবং ‘ইন্ডিয়ান কালচারাল ট্রাস্ট’ বইটি প্রকাশে সহযোগিতা করেছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথিদের মধ্যে ছিলেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের অখিল ভারতীয় প্রচার প্রমুখ সুনীল আম্বেকর, পূর্বাচল সংস্কৃতি কেন্দ্রের পরিচালক ড. আশিস গিরি, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইনস্টিটিউট অফ এশিয়ান স্টাডিজের পরিচালক ডঃ স্বরূপ প্রসাদ ঘোষ এবং ভারতীয় জাদুঘরের সহ-পরিচালক ডঃ সায়ান ভট্টাচার্য। এছাড়াও, মঞ্চে ছিলেন প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী বিদুষী বিম্ববতী দেবী (মণিপুরি নৃত্য) এবং বিদুষী পারমিতা মৈত্র (কত্থক নৃত্য)।
চিত্রাঙ্কন প্রদর্শনীতে শিল্পপ্রেমীদের ব্যাপক ভিড়
অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে আয়োজিত নর্তেশ্বর চিত্র প্রদর্শনী শিল্পীদের আকৃষ্ট করে। এই প্রদর্শনীতে দেশব্যাপী ১৫ জন স্বনামধন্য শিল্পী নর্তেশ্বর শিবের উপর ভিত্তি করে চিত্র প্রস্তুত করেন। এই প্রথম বাংলায় এত বড় পরিসরে শিল্পীরা নিজেদের শিল্পকলা প্রদর্শন করলেন। এই চিত্রগুলি নর্তেশ্বর শিবের বিভিন্ন অভিব্যক্তি এবং সাংস্কৃতিক গভীরতাকে জীবন্ত করে তুলেছিল। সংস্কার ভারতীর ভিজ্যুয়াল আর্টস বিভাগ দ্বারা আয়োজিত এই প্রদর্শনীটি আগামী প্রজন্মকে বাংলার সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সাথে সংযুক্ত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টা ছিল।
অংশগ্রহণকারীদের প্রশংসা করে – অনুষ্ঠানের আয়োজক সংস্কার ভারতী (পশ্চিমবঙ্গ)-র কার্যনির্বাহী সভাপতি সুভাষ ভট্টাচার্য বলেছেন, এই অনুষ্ঠানটি বাংলার প্রাচীন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে পুনরুজ্জীবিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তিনি বলেন, এই ধরনের উদ্যোগ শুধু স্থানীয় সংস্কৃতিরই প্রসার ঘটাবে না, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃতি দেবে।