নিউজ ডেস্ক: ২০২৪ সাল বিদায় নেওয়ার সময় হয়ে গেছে। রয়েছে আর মাত্র কয়েকটা দিন, নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে। তবে বিদায়ের আগে বিদায়ী বছরটা ফুটবল দিয়ে গেছে অনেক কিছু। এশিয়া, আফ্রিকা, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা এবং ইউরোপ– একইসঙ্গে ৪ মহাদেশে হয়েছে মহাদেশীয় ফুটবলের আসর। মহাদেশের ফুটবল আসর থেকে আমরা কি পেলাম তারই পর্যালোচনা থাকছে এই প্রতিবেদনে –
আর্জেন্টিনার টানা দ্বিতীয় শিরোপা :
বিশ্বকাপ জিতে ফেবারিটের তকমা নিয়েই কোপা আমেরিকায় মাঠে নেমেছিল আর্জেন্টিনা। খেলেছেও ফেভারিটের মত। দলের সবচেয়ে বড় তারকা লিওনেল মেসি নিজের সেরা ছন্দে না থাকলেও আলবিসেলেস্তেদের ত্রাতা হয়ে আসেন লাউতারো মার্তিনেজ। পুরো আসরে ছিলেন দারুণ ছন্দে। করেছেন আসরের সবচেয়ে বেশি গোল।
ফাইনালে লিওনেল মেসির ইনজুরিতে মাঠ ছাড়া, শিরোপা জিতেই আর্জেন্টাইন তারকা আনহেল ডি মারিয়ার অবসর নেওয়া কিংবা কলম্বিয়ার বিপক্ষে দুর্দান্ত ফুটবল– সবই বুঁদ করে রেখেছিল ফুটবল দুনিয়াকে।
এশিয়ায় সেরা কাতার, আফ্রিকায় আইভরিকোস্ট:
বছরের শুরুতেই দুর্দান্ত দুই আসর দেখার সুযোগ মিলেছে এএফসি এশিয়ান কাপ এবং আফ্রিকান কাপ অব নেশন্সের সুবাদে। এশিয়ান কাপে জর্ডানের দুর্দান্ত উত্থান, দক্ষিণ কোরিয়ার অসাধারণ ফুটবল শৈলী ছিল চোখে পড়ার মতোই। তবে শেষ পর্যন্ত শিরোপা গিয়েছে স্বাগতিক কাতারের ঘরে। টানা দ্বিতীয়বার শিরোপা জয় করেছে দেশটি।
অঘটন আর জমজমাট ছিল আফ্রিকান কাপ অব নেশন্স। আফকনে এবার ছিল চমক। মরক্কো, সেনেগাল, মিশন কিংবা ক্যামেরুনের মতো নামী দলগুলো বিদায় নিয়েছিল। অবশ্য ফাইনালে ছিল দুই পাওয়ারহাউজ নাইজেরিয়া এবং আইভরিকোস্ট। যেখানে শিরোপা উৎসব করেছে আইভরিকোস্টই।
ইউরোপ সেরা স্পেন:
আরও একটা বার ইউরোর ফাইনালে ইংল্যান্ড। গেলবার নিজেদের মাঠে ইতালির কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল তাদের। এবারে জার্মানিতে আবারও ইউরোর ফাইনালে ছিল ইংলিশরা। কিন্তু এবারেও হলো না শিরোপা ছুঁয়ে দেখার সৌভাগ্য। স্পেনের দুর্দান্ত ফুটবলের সামনে ২-১ গোলের হারে হতাশায় ডুবেছিল হ্যারি কেইনরা। ২০১২ সালের পর ১ যুগের অপেক্ষা শেষ করে ফের মহাদেশীয় শিরোপা নিজেদের ঘরে তোলে স্পেন। টুর্নামেন্টের বড় আকর্ষণ হয়ে ছিলেন লামিনে ইয়ামাল। ১৭ বছরের এই কিশোর বিমোহিত করেছেন পুরো ফুটবল দুনিয়াকে। অনেকের কাছেই খ্যাতি পেয়েছেন নতুন যুগের মেসি নামে।
ক্লাব ফুটবলে লেভারকুসেনের অবিশ্বাস্য উত্থান, রিয়ালের শ্রেষ্ঠত্ব:
ক্লাব ফুটবলে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে বড় হয়ে ছিল বায়ার লেভারকুসেনের বীরত্ব। মরসুমের শুরুতেই ২০২৩ সালে চমক দিয়েছিল তারা। তবে ২০২৪ সালে নিজেদেরই যেন ছাড়িয়ে যাওয়ার মিশনে নেমেছিল দলটি। পুরো ৯ মাসের মরসুমে যারা হেরেছে কেবল এক ম্যাচ। সেটাও ইউরোপা লিগের ফাইনালে আতালান্টার কাছে। প্রথম দল হিসেবে জার্মান বুন্দেসলিগা তারা শেষ করে অপরাজিত থেকে।
তবে আরও একটা বার রিয়াল মাদ্রিদই থাকলো ইউরোপের সেরা ক্লাব হয়ে। চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে তারা হারিয়েছে জার্মান ক্লাব বুরুশিয়া ডর্টমুন্ডকে। ঘরে তুলেছে নিজেদের ১৫তম চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা। আর উয়েফা সুপার কাপের ম্যাচে তাদের জয় আসে আতালান্টার বিপক্ষে।
বিতর্কিত ব্যালন ডি’ অর:
রদ্রি নাকি ভিনিসিয়ুস জুনিয়র? প্রশ্নটা ছিল নিছক কাগজে কলমে। বিশ্বের সেরা ফুটবলারের স্বীকৃতি ব্যালন ডি’অর ব্রাজিলিয়ান তারকা ভিনিসিয়ুসের হাতে যাচ্ছে, সেটা একপ্রকার অনুমিতই ছিল। রিয়াল মাদ্রিদের পক্ষ থেকে সব আয়োজনই সমাপ্ত করা হয়েছিল। এমনকি বিশেষ জেটে ফ্রান্সে যাওয়ার কথা ছিল দলের একাধিক সদস্যের। কিন্তু একটা ফোন কলে ভেস্তে যায় সবই।
ম্যানচেস্টার সিটির পক্ষ থেকে ফোন করে জানানো হয়, ভিনিসিয়ুস নয় বরং রদ্রিই পাচ্ছেন ব্যালন ডি অ’রের মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার। এরপরেই আলোচনা আর সমালোচনার ঝড় বয়ে যায় পুরো ফুটবল দুনিয়াতে। পুরো অনুষ্ঠান বর্জন করে রিয়াল মাদ্রিদ। পুরস্কার ঘোষণার সময়েও দর্শকদের মধ্যে থেকে ভেসে আসছিল ভিনিসিয়ুসের নামটাই।
যদিও একে বারে বছরের শেষদিকে ফিফা দ্য বেস্টের পুরস্কার ঠিকই নিজের করে নিয়েছিলেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। তাতে মনের ক্ষতে কিছুটা হলেও প্রলেপ দিতে পেরেছেন ব্রাজিলের এই তারকা।