নিউজ ডেস্ক: কেউ শিল্পকলায় কেউ রাজনীতিতে অসামান্য অবদানের জন্য জাতীয় স্তরে নানান পুরষ্কার পেয়েছেন। চলতি বছর দেশের বহু সুযোগ্য সন্তানকে পুরষ্কার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু
স্মৃতির অতলে চলে গিয়েছেন এক মহামানব যিনি বাঁচিয়েছেন বহু প্রাণ। রক্ত দান আন্দোলনের
পুরোধা ব্যক্তি দেবব্রত রায় চলতি বছর জানুয়ারি মাসে বয়স জনিত কারণে ইহলোক ত্যাগ করেছেন।
মরণোত্তর তাঁকে পদ্মশ্রী পুরষ্কার দেওয়া হোক এই দাবি জানালেন তার ছাত্ররা।
কে ছিলেন দেবব্রত রায়? রাম কৃষ্ণ মিশন শিল্পপীঠে শিক্ষকতা করার পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গে স্বেচ্ছায়
রক্তদান আন্দোলনের জনক ছিলেন তিনি। বাংলার বাইরে রক্তদান আন্দোলনকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন
তিনি। রেডক্রসের হয়ে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরেছেন নিজের কথা। বাংলায় আজ পাড়ায় পাড়ায় রক্তদান
শিবির হয়। কিন্তু ষাট ও সত্তরের দশকে ব্যাপারটা এত সহজ ছিল না। সে যুগে স্মার্ট ফোন
কিংবা মোবাইল তো দূর অস্ত ল্যান্ড লাইন ফোন ছিল দুর্লভ বস্তু। যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবের
ফলে মানুষকে রক্তেদানের জন্য উদ্বুদ্ধ ও একত্রিত করা খুব কঠিন কাজ ছিল। তার উপর কুসংস্কার।
কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের গ্রাম, মফঃস্বল ও শহর ঘুরে তিনি সেই কঠিন কাজটা করেছিলেন। তাঁর
পরিশ্রমের ফলে জন্ম হয় এক সংস্থার যার নাম অ্যাসোসিয়েশন অফ ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স
ওয়েস্ট বেঙ্গল।
তিনি নিজেও রক্তদানে সেঞ্চুরি করেছেন। তাঁর দেওয়া রক্তে
বহু মানুষ নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে এসেছে। তাঁর রক্তদান আন্দোলনের ফলে আজ আর
রক্তের সংকট হয়না বললেই চলে। লক্ষ লক্ষ ইউনিট রক্ত আছে আজ বাংলার বিভিন্ন হাসপাতাল
ও ব্লাড ব্যাঙ্কে। কিন্তু সত্তরের দশকে এই সংখ্যা ছিল কয়েক হাজার ইউনিট। শহর ও গ্রামে
ঘুরে, রক্তদান আন্দোলন সংগঠিত করে, হাজার হাজার রক্তদান শিবির করে আজ দিন বদল হয়েছে।
এই অসাধারন কাজ করেও প্রচারের আড়ালেই থেকে গিয়েছেন দেবব্রত রায়। রবিবার তাঁর মৃত্যুর
প্রায় এক মাস পর বেলঘড়িয়ায় তাঁর স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে সম্মিলিত হয়েছিলেন তাঁর ছাত্ররা।
তাঁদের দাবি সমাজে অবদানের জন্য বিশেষ করে রক্তদান আন্দোলনের জনক হিসেবে কেন্দ্র সরকারকে
মরোনত্তর পদ্মশ্রী পুরষ্কার দিতে হবে দেবব্রত বাবুকে। এর জন্য প্রয়োজনীয় ড্রাফট তৈরি করে সরকারের
কাছে তাঁরা আবেদন জানাবেন।