নিউজ ডেস্ক: বিজয়া দশমীতে ঘরের মেয়ের বিদায়। আবার এক বছরের অপেক্ষা। তবুও বিসর্জনের শেষে মিষ্টিমুখ, আলিঙ্গন ও শুভেচ্ছা জানানোর পালা চলে। বিদায়ের দুঃখের আবহেই কেন এহেন আনন্দ রীতি জারি থাকে আজকের প্রতিবেদনে আসুন সেটাই জেনে নি।
ফেসবুক-হোয়াটসাঅ্যাপ খুললেই চারিদিকে খালি একটাই বার্তা, ‘শুভ বিজয়া’। দশমী চলে আসা মানেই উমাকে বিদায় জানানোর পালা। প্রতিমা বিসর্জনের শেষে বিজয়া করার পালা। বড়দের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে বা ছোটদের শুভেচ্ছা জানিয়ে আমরা বলি ‘শুভ বিজয়া’। কিন্তু মা চলে গেলে তো সবার মনেই থাকে বিষাদের সুর। তাহলে কেন শুভ বিজয়া বলা হয়? আসলে পুরাণ অনুসারে মহিষাসুরের সঙ্গে ন’দিনের ভীষণ যুদ্ধের শেষে দশম দিনে অত্যাচারী অসুররাজকে বধ করেছিলেন দশভুজা দেবী দুর্গা। দশম দিনে নারী শক্তির জয়লাভকেই বিজয়া বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল। তাই এই দিন ‘শুভ বিজয়া’ বলার চল।
তাই এই দিনেই বিসর্জনের পর চলে বিজয়ার পালা, অর্থাৎ মিষ্টিমুখ, কোলাকুলি, প্রণাম, স্নেহ-আশীর্বাদ বিনিময়। এ ছাড়াও অনেক রীতি রয়েছে, যেমন, দশমীর দিন কোনও কোনও বাড়িতে জোড়া ইলিশ আনা হয়, যাত্রাঘট পাতা হয়, আবার লক্ষ্মীপুজোর কদম ফুল কিনে ফেলা হয়। নিয়ম রীতির অন্ত নেই বাঙালির।
অন্যদিকে আরেক ইতিহাসও রয়েছে। ঋগবেদের সময়ে এক শরৎ থেকে আরেক শরতে বছর গণনা করা হত। শরৎ ঋতুতেই বছর আরম্ভ হত। তখন দীর্ঘায়ু কামনায় বলা হত, ‘জীবেম শরদ শতম’। যা আদপে একধরনের শতায়ু কামনা। বিজয়া দশমী ছিল শরৎ বর্ষের প্রথম দিন, অর্থাৎ বিজয়া দশমীই হল নববর্ষের উৎসবের দিন। আত্মীয়-পরিজন নিয়ে আনন্দ-আহ্লাদে, খাওয়াদাওয়ার মধ্যে দিয়ে দিনটি অতিবাহিত করার নিয়ম ছিল। মনে করা হত, বছরের প্রথমদিন ভালো কাটালে সারাবছর ভালো যাবে। বিজয়া নামের উৎপত্তির একটি সংগত কারণ এখানে খুঁজে পাওয়া যায়; এই দিনটিতে প্রার্থনা করা হত ‘নববর্ষে সকলের বিজয় হউক’। স্পষ্টভাবে বললে, বৈশাখের নববর্ষ বা পুণ্যাহ হল ব্যবসায়ীদের। এককালে জমিদার, ভূস্বামীদের খাজনা আদায়ের জন্যেই তার প্রচলন ঘটেছিল। অগ্রহায়ণে নবান্ন হল কৃষকদের নববর্ষ। বর্ধমানের কিছু অঞ্চলের কৃষকেরা আবার আষাঢ়ে নববর্ষ ও হালখাতা পালন করেন আজও। আম বাঙালির নববর্ষ ছিল বিজয়া দশমী। যা আনন্দের উৎসব, বর্ষের শুভারম্ভ। কালে কালে সেই নববর্ষ হারিয়ে গিয়েছে। কিন্তু রয়ে গিয়েছে সামাজিক আচারগুলি। উমার বিসর্জনের পর প্রণাম, আশীর্বাদ, কোলাকুলি, মিষ্টিমুখ অদ্যাবধি সেই স্মৃতিই বহন করছে।