নিউজ ডেস্ক: মাত্র ২.১ কিলোমিটারের জন্য আশাহত হওয়া এবং ফের আশায় বুক বাঁধার মধ্যে ব্যবধান প্রায় ৪ বছর। ২০১৯ এর ২২ জুলাই লঞ্চ হয়েছিল চন্দ্রযান-২। ইতিহাসের দোরগোড়ায় ছিল সেদিন দেশ, কারণ ভারতীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এই যানের ল্যান্ডার পা রাখবে চাঁদের দুর্গমতম স্থান দক্ষিণ মেরুতে, যে রেকর্ড বিশ্বের অন্য দেশের কাছে অধরা। কিন্তু সামান্য ত্রুটির ফলে ISRO সেদিন ব্যর্থ হয় রেকর্ড তৈরি করতে। তবে সেই আংশিক ব্যর্থতার রেশ কাটিয়ে উঠে দিনকয়েক পর যখন ‘চন্দ্রযান-৩’-এর ঘোষণা করা হল ইসরোর তরফে, সেদিন থেকেই ফের আশায় বুক বাঁধা শুরু করে ভারত।
Chandrayaan 3 launch date time
কেটে গিয়েছে ৪ টি বছর। চুপিসারে প্রজেক্টের কাজ এগিয়েছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা। আর, চাঁদের দক্ষিণ মেরু জয়ের রেকর্ড অধরা এখনও। অর্থাৎ, ২ এর অধরা রেকর্ড জয় করার হাতছানির সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আগামীকাল ১৪ জুলাই, দুপুর ২.৩৫ মিনিটে শ্রীহোরিকোটা থেকে ফের উৎক্ষেপণ হতে চলেছে ভারতের চাঁদে পাড়ির তৃতীয় যাত্রাটি। ইসরো আধিকারিকদের মতে, উৎক্ষেপণের প্রায় ১ মাস পর চাঁদের কক্ষপথে পৌঁছবে যান, এবং আনুমানিক ২৩- ২৪ আগস্ট চাঁদের পৃষ্ঠে অবতরণ করার কথা ল্যান্ডার বিক্রম এবং রোভার প্রজ্ঞানের। সূত্র মতে, সফট ল্যান্ডিং-এর জন্য প্রযুক্তিগতভাবে এই মিশনকে আরও মজবুত করা হলেও এর বাজেট কিন্তু দ্বিতীয় মিশনের চেয়েও অনেকটাই কম! যেখানে চন্দ্রযান-২ এর বাজেট ছিল ৯৭০ কোটি টাকা মতো, সেখানে চন্দ্রযান-৩ এর বাজেট ৬১৫ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন: GST on Multiplex Food: পপকর্ন এবার সাধ্যের ভিতর, কমছে মাল্টিপ্লেক্সে খাবারের দাম
‘চন্দ্রযান-২ ‘ মিশন যেখানে শেষ হয়েছিল, ৩.O ভার্সন শুরু হচ্ছে সেখান থেকেই। অর্থাৎ, আবারও চাঁদের দক্ষিণ মেরুর দুঃসাহসিক যাত্রাই করতে চলেছে এই মিশন। চাঁদের ৭০ ডিগ্রি অক্ষাংশের আশেপাশে ল্যান্ডিং করবে রোভার। উল্লেখ্য, চাঁদের নিরক্ষীয় অঞ্চলের মতো নিরাপদ নয় এই মেরু অঞ্চল। কারণ, এই অঞ্চলের মাটি অত্যন্ত এবড়োখেবড়ো এবং কয়েক হাজার কিলোমিটারের দুর্গম খাদ রয়েছে অসংখ্য। সবেচেয়ে বড় কথা, এই এলাকাটি পৃথিবীর অভিমুখের একদম বিপরীতে, এখানে প্রবেশ করে না সূর্যের আলোও। তাপমাত্রা নেমে যায় -২০৩ ডিগ্রি পর্যন্ত! নাসার দাবি, চাঁদের দক্ষিণ মেরুর একাধিক এলাকায় সূর্যের আলো পৌঁছয়নি কোটি কোটি বছর ধরে!
বাধা অজস্র, যাত্রা দুর্গমতর! তা সত্ত্বেও এবারের মিশনের সফট ল্যান্ডিং নিয়ে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী ইসরো প্রধান শ্রীধর সোমনাথ। তিনি জানিয়েছেন, সফট ল্যান্ডিং সফল করতে শুধরে নেওয়া হয়েছে আগেরবারের ভুল গুলি। আরও উন্নতমানের ল্যান্ডিং সিকোয়েন্স তৈরি করতে ল্যান্ডারে পাঁচটির পরিবর্তে রাখা হয়েছে চারটি থ্রাস্টার ইঞ্জিন। বাড়ানো হয়েছে সোলার প্যানেলের আকার। মজুত করা হয়েছে আরও অধিক পরিমাণে জ্বালানি। মূলত চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে জলের উপস্থিতি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করার দায়িত্বই পুনরায় দেওয়া হয়েছে ‘চন্দ্রযান-৩’ কে। ISRO-এর ইউটিউব চ্যানেল এবং দূরদর্শনে লাইভ সম্প্রচার দেখানো হবে ‘চন্দ্রযান-৩’-এর। ৪ বছর আগের অসম্পূর্ণ সাফল্যকে সাকার করতে গোটা বিশ্বকে সাক্ষী রেখে আবারও একবার ইসরোর নেতৃত্বে বুক বাঁধছে ভারত।