Wednesday, October 23, 2024

Logo
Loading...
upload upload upload

bonedi barir durga puja

Shobhabazar Rajbari: শোভাবাজার রাজবাড়ির দুর্গাপুজো যেন সংস্কৃতির পীঠস্থান, জানুন ইতিহাস


নিউজ ডেস্ক: কলকাতার ইতিহাস লিখতে বসলে যার কথা না বললে ইতিহাস অসম্পূর্ণ থেকে যায় তা হল শোভাবাজার রাজবাড়ি (Shobhabazar Rajbari)। কেবল ইতিহাস নয়, বাংলা ও বাঙালির সংস্কৃতির ইতিহাসেও শোভাবাজার রাজবাড়ির ভূমিকা অনস্বীকার্য। যাত্রা, নাট্যজগত, কবিগানের লড়াই, বাঈজি নাচ, সঙ্গীত সব ক্ষেত্রেই গুণীজনের পৃষ্ঠপোষকের চরিত্রে দেখা গিয়েছে শোভাবাজারের দেব পরিবারকে। অষ্টাদশ শতাব্দী থেকে একবিংশ শতাব্দী, সংস্কৃতি চর্চার সঙ্গে আজও নাম জড়িয়ে দেব পরিবারের। কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে শোভাবাজার রাজবাড়ির পরিচিতি দুর্গাপুজোকে ঘিরেই। এখনও প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ ভিড় করেন রাজবাড়ির ঠাকুরদালানের সামনে। শোভাবাজার রাজপরিবারের প্রতিষ্ঠাতা রাজা নবকৃষ্ণ দেব। তাঁর হাত ধরেই, ১৭৫৭ সালে শুরু দুর্গাপুজোর।

১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে পলাশির যুদ্ধ থামল। ইংরেজরা চাইল এই যুদ্ধের বিজয়োৎসব পালন করতে। এই বিজয়োৎসবের ভার পড়ল লর্ড ক্লাইভের বিশ্বস্ত মুন্সি রাজা নবকৃষ্ণ দেবের ওপর। কিছুদিন বাদেই দুর্গাপুজো। শোভাবাজার রাজবাড়িতে (Shobhabazar Rajbari) নিমেষে গড়ে উঠল ঠাকুরদালান। আয়োজন হল মা দুর্গার আবাহনের। শোভাবাজার রাজবাড়িতে শুরু হল এক জাঁকজমকপূর্ণ দুর্গাপুজো। অনেকে বলে, রাজা নবকৃষ্ণ দেবের দুর্গাপুজো ছিল পলাশির যুদ্ধের বিজয়োৎসব। পুজোর সময় অনেক গণ্যমান্য লোকেরা এলেন। এলেন লর্ড ক্লাইভও। নাচগানের সঙ্গে থাকল সাহেব ও গণ্যমান্য অতিথিদের জন্য পানভোজনের অঢেল আয়োজন। এসব সত্ত্বেও পুজো পদ্ধতি কিন্তু চলল শাস্ত্র মেনেই এবং সম্পূর্ণ নিয়মনিষ্ঠার সঙ্গে।

৩৬ বছর পর্যন্ত নবকৃষ্ণের কোনও সন্তান না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত বংশরক্ষার জন্য ১৭৬৮ সালে দাদার ছেলে গোপীমোহনকে দত্তক নেন। এর ১৩ বছর বাদে রাজার পঞ্চম রানি জন্ম দিলেন পুত্র রাজকৃষ্ণের। পণ্ডিতেরা গণনা করে বললেন, রাজকুমারের পক্ষে উত্তরের বাড়ি মঙ্গলজনক নয়। নবকৃষ্ণ সঙ্গে সঙ্গে গড়ে তুললেন ঠাকুরদালান সমেত দক্ষিণের ছয় মহলা বাড়ি। রাজা নবকৃষ্ণ প্রথমে উত্তরদিকের বাড়িতে দুর্গাপুজো (Shobhabazar Rajbari) শুরু করেছিলেন। কিন্তু পরে দক্ষিণদিকের বাড়িটাতেও ১৭৯০ সালে দুর্গাপুজোর সূচনা করেন। ওই বছরই সম্পত্তি ভাগাভাগি হয় গোপীমোহনের সঙ্গে রাজকৃষ্ণের। এরপর থেকেই দুই বাড়িতে আলাদা পুজো শুরু হয়। উত্তরদিকেরটি গোপীমোহনের ছেলে রাধাকান্ত দেবের আর দক্ষিণ দিকেরটি রাজকৃষ্ণ দেবের পুজো বলে চিহ্নিত করা হয়।

শোভাবাজার রাজবাড়ির (Shobhabazar Rajbari) পুজো শুরু হয় মহালয়ারও আগে, কৃষ্ণা নবমীর বিকেলে। এই দিন রীতিনীতি মেনে চন্ডী মণ্ডপ স্থাপন এবং মা দুর্গার আগমন-কে কেন্দ্র করে কৃষ্ণানবম্যাদি কল্পারম্ভ ও বোধনের পুজো শুরু হয়। প্রথা মেনে প্রধান পুরোহিত প্রথমে বোধনের ঘট স্থাপন করেন। তারপর ব্রতিরা প্রতিদিন সকালে ঠাকুরদালানের খিলানে খিলানে বসে মধুসূদন পাঠ, বগলা পাঠ, রামায়ণ পাঠ, চন্ডী পাঠ, দুর্গা নাম জপ করেন ষষ্ঠীর সকাল অবধি। প্রধান পুরোহিত কৃষ্ণা নবমী থেকে দু’বেলা প্রথমে এই বোধনের পুজো আরতি করবেন তারপর ষষ্ঠী থেকে দেবীর মূর্তি পুজো হবে, এই হল প্রথা। বাড়ির গৃহদেবতা গোপীনাথ জীউ ও রাধারাণী। এই সময়ে দোতলার ঘর থেকে তাঁরা তদারকি করেন যাতে বাড়ির মেয়ে দুর্গার বাপের বাড়িতে অভ্যর্থনায় কোনও ত্রুটি না থাকে। এই প্রথা অবশ্য আজও ঐতিহ্যের সঙ্গে অটুট রেখেছে রাজপরিবার।

Sweta Chakrabory | 15:13 PM, Thu Oct 10, 2024
upload
upload