Vitamin D: আমাদের শরীরে কতটা ভিটামিন-ডি প্রয়োজন? এর উৎস কী কী?
নিউজ ডেস্ক: বর্তমানে ভিটামিন-ডি (Vitamin D) এর অভাবজনিত সমস্যায় অনেক মানুষই ভোগেন। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ভিটামিন-ডি মূলত ক্যালসিয়ামকে শরীরে শোষণ করতে প্রয়োজন হয়। আমরা সবাই জানি, ক্যালসিয়াম হাড়কে শক্ত করে। এ ছাড়া ক্যালসিয়ামের আরও অনেক কাজ মানবদেহে রয়েছে। ভিটামিন-ডি (Vitamin D) এর অভাবে শিশুদের রিকেট রোগ হয়। শিশুদের পা ধনুকের মতো বেঁকে যায় এবং মাথার খুলি বড় হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন এই রোগে ভুগলে দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধিও ব্যাহত হয়। এর পাশাপাশি শরীরে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কমে যায়। দেহে ভিটামিন-ডি এর অভাবে চোয়ালের গঠনও ঠিকঠাক হয় না, অসময়ে দাঁত পড়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা যায়। বড়দের অস্টিওম্যালেসিয়া নামের এক প্রকার রোগ হয় ভিটামিন-ডি এর অভাবে। এই রোগে বয়স্কদের হাড় থেকে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস ক্ষয় হয়ে পড়ে। কখনও কখনও কোমরে ও মেরুদণ্ডে বাতের ব্যথার মতো ব্যথা অনুভূত হয়। অনেক ক্ষেত্রে মেরুদণ্ডও বেঁকে যায়।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ১৯ থেকে ৭০ বছর বয়সি প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিদিন নিয়মিত (Health Tips) করে ১৫ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন-ডি গ্রহণ করা উচিত। বিভিন্ন খাদ্যের মাধ্যমে, পিলের মাধ্যমে ভিটামিন-ডি নেওয়া যেতেই পারে। এর পাশাপাশি রোদেও প্রচুর ভিটামিন-ডি থাকে। তবে ভিটামিন-ডি এর পরিমাণ শরীরে বেড়ে যাওয়াও ঠিক নয়, এমনটাই বলছেন চিকিৎসকরা। কারণ এর প্রভাবে হাইপারক্যালসেমিয়া রোগ হতে পারে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। চিকিৎসকরা পরামর্শ দিচ্ছেন, দৈনিক ছোট ছোট ভিটামিন-ডি এর ডোজ আপনারা নিতেই পারেন। ডি-২, ডি-৩ সাপ্লিমেন্ট নেওয়া যেতেই পারে। কিন্তু অবশ্যই তা যে কোনও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিতে হবে। কারণ এর সঙ্গে অনেক কিছু ফ্যাক্টর কাজ করে, যেমন আপনার শরীরের অবস্থা কেমন, আপনি কোন পরিবেশে থাকেন- এ সমস্ত কিছুই। তবে শরীরে মারাত্মক পরিমাণে ভিটামিন-ডি এর ঘাটতি হলে সাপ্তাহিক বড় ডোজ নেওয়া যেতে পারে।
২০২৩ সালের একটি গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তিদের মৃত্যুহার কমিয়ে দিয়েছে ভিটামিন-ডি এর বড় পরিমাণের সাপ্তাহিক ডোজ (Health Tips)। অন্যদিকে, সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে বেশিরভাগ আমেরিকার নাগরিকই ভিটামিন-ডি (Vitamin D) এর অভাবে ভোগেন বা পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন-ডি তাঁরা পান না। ২০২২ সালে এই সমীক্ষাটি হয়। যেখানে দেখা যাচ্ছে ৪১ শতাংশ আমেরিকার নাগরিকের শরীরে ভিটামিন-ডি এর অভাব রয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ জনেরই বয়স ২০ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে। ভিটামিন-ডি এর অভাবে ক্লান্তি দেখা যায় শরীরে, কাজে অনীহা থাকে, হাড়ের ব্যথার মতো নানা রকমের উপসর্গও দেখা যায়। তবে কখনও আপনি বুঝতে পারবেন না যে আপনার ভিটামিন-ডি এর অভাবের জন্য শরীরে এইগুলি রোগগুলি হচ্ছে। আপনার শরীরে ভিটামিন-ডি এর অভাব রয়েছে কিনা তা জানতে আপনাকে রক্ত পরীক্ষা করতেই হবে। তবে প্রতিবেদনে শুরুতেই যেমন বলা হয়েছে, শরীরে উচ্চ পরিমাণে ভিটামিন-ডি নিলে হাইপারক্যালসেমিয়া হতে পারে। এই হাইপারক্যালসেমিয়া রোগে ঘনঘন প্রস্রাব, দুর্বলতা ভাব, বমি বমি ভাব ইত্যাদি দেখা যায়। ভিটামিন-ডি এর অত্যধিক পরিমাণের ফলে কিডনিতে পাথরও হতে পারে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। এর পাশাপাশি নানা রকমের কিডনির জটিলতাও হতে পারে।
ভিটামিন-ডি সমৃদ্ধ অনেক খাবারই রয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে আপনি নিতে পারেন পনির, ডিমের কুসুম, চর্বিযুক্ত যে কোনও মাছ, যেমন ম্যাকরাল, স্যামন, টুনা ইত্যাদি। এর পাশাপাশি প্রাতঃরাশের টেবিল আপনি রাখতে পারেন দুধ, কমলার রস, মাশরুম ইত্যাদি। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, অ্যাভোকাডো এবং বাদামেও ভরপুর পরিমাণে ভিটামিন-ডি থাকে। অনেক মানুষই সকালে ঘুম থেকে উঠে অথবা রাতে শোবার আগে ভিটামিন-ডি সাপ্লিমেন্ট নিতে বেশি পছন্দ করেন। তবে এর ফলে ভিটামিন-ডি এর কার্যকারিতা বাড়ে নাকি, তা নিয়ে চিকিৎসকরা কিছু বলতে পারছেন না।
সূর্যালোক থেকে কীভাবে নেবেন ভিটামিন-ডি
১) চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, রোদে আপনার ছায়া আপনার তুলনায় যখন ছোট হেব সেসময়ই আপনার ত্বক সবচেয়ে বেশি ভিটামিন ‘ডি’ তৈরি করতে পারবে। ২) অতিবেগুনি রশ্মি কাচ ভেদ করতে পারে না। তাই গাড়ি বা ঘরের ভেতর জানালা বন্ধ অবস্থায় রোদ এলেও লাভ নেই, পর্যাপ্ত ভিটামিন-ডি মিলবে না। ৩) পোশাক ও সানস্ক্রিন ত্বকে সরাসরি ভিটামিন-ডি লাগতে বাধা দেয়। তাই আপাদমস্তক ঢেকে বাইরে বের হয়ে লাভ নেই। অন্তত হাত-পা বা মুখের কিছু অংশ খোলা রাখুন। ৪) বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের ভিটামিন-ডি তৈরি করার ক্ষমতা কমতে থাকে। তাই বয়স্কদের বেশি পরিমাণে ভিটামিন-ডি এর প্রয়োজন হয়। সূর্যালোকে দিনে অন্তত ২০ মিনিট কাটাতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
DISCLAIMER: এই প্রতিবেদনটি বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী লেখা। এর সঙ্গে মাধ্যম-এর কোনও সম্পর্ক নেই। মাধ্যম এর কোনও দায় নিচ্ছে না। এখানে বলা যে কোনও উপদেশ পালন করার আগে অবশ্যই কোনও চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।